তদন্ত শেষ। বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছে সিবিআই। কিন্তু আদালতের বিচার এখনও বাকি। এভাবেই কেটেছে মাসের পর মাস। বছরও ঘুরেছে বহু। তবু ফয়সলা হয়নি। সম্প্রতি এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিশন। ঠিক কী জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। প্রতিবাদ মিছিলে স্তব্ধ হচ্ছে রাজপথ। ধর্ষণ বিরোধী পোস্টারে মুখ ঢেকেছে শহর। সকলের মুখে একটাই স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। বারবার প্রশ্ন উঠছে তদন্তের গতি নিয়ে। তদন্তের দায়িত্ব থাকা সিবিআই ঠিক কী করছে, জানতে উৎসুক জনতা। এই আবহে সামনে এল কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিটির চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট।
এ দেশের একাধিক দুর্নীতি কান্ডে তদন্তের ভার সিবিআই সামলেছে। বেশ কিছু মামলার সফল নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে এখনও আদালতের বিচারের আশায় দিন গুনছে বহু মামলা। আর সেই সংখ্যাটা চমকে দেওয়ার মতো। কেন্দ্রীয় ভিজিলান্স কমিশনের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, সিবিআই তদন্তের পরও ৬৯০০ দুর্নীতি মামলায় ফয়সলা বাকি। যার মধ্যে ৩৬১ টি মামলার বিচার চলছে বিগত ২০ বছর ধরে। ৫, ১০, ১৫ বছর ধরে চলছে এমন মামলার সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সবকটি মামলাই দেশের কোনও না কোনও আদালতে বিচারাধীন। শুধু তাই নয়, আদালতে পুনরায় বিচার বা রিভিশনের আর্জি জানানো হয়েছে, এমন মামলার সংখ্যাও প্রায় ১৩ হাজার। এর মধ্যেও এমন বহু মামলা রয়েছে যা ২০ বছর ধরে আদলতের নির্দেশের অপেক্ষায় দিন গুনছে। কমিশনের দাবি, এই অবস্থার প্রধান কারণ লোকবলের অভাব। সরকারি পদে এখনও হাজার হাজার পদে নিয়োগ বাকি। সেইসব কাজ অন্যদের সামলাতে হচ্ছে। ফলত একটি মামলার নিষ্পত্তি হতেই বছরের পর বছর সময় কেটে যাচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে। সেসব কাটিয়ে সঠিক ন্যায়বিচারের পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনেককেই। এমনিতে এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ। কিন্তু ২০ বছর ধরে বিচার চলছে এমন মামলার কথা শুনে অবাকই হয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।
কমিশনের রিপোর্টে আরও একটা দিক উঠে এসেছে। সেটি সিবিআই সম্পর্কিত। জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের তদন্ত শেষ হয়নি এমন ঘটনার সংখ্যা ৬৫৮টি। যার মধ্যে ৪৮ টি ঘটনার তদন্ত চলছে পাঁচ বছর ধরে। সাধারণত কোনও ঘটনার তদন্ত শেষ করতে সর্বোচ্চ এক বছর সময় নেয় সিবিআই। তাঁদের সাফল্যের তালিকা নেহাতই ছোট নয়। অথচ এত সংখ্যক ঘটনায় এখনও কিনারা করে উঠতে পারেনি সিবিআই। স্বাভাবিক ভাবেই এইসব ঘটনার তদন্ত শেষ হয়ে তা যখন আদালতে উঠবে, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে। তারওপর আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কাটবে কয়েক বছর। সবমিলিয়ে হয়তো দেখা যাবে, ১০-১৫ বছর লেগে গিয়েছে একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে। এক্ষেত্রেও অবশ্য লোকবলের অভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রায় ১৬০০ পদে নিয়োগ বাকি। সুতরাং এত সংখ্যক মানুষের কাজ অন্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে সামলাচ্ছেন। তাই তাতে সময় লাগতে বাধ্য। এমনটাই মনে করছে কমিশন। আপাতত আর জি কর কাণ্ডের তদন্ত কবে শেষ হয়, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তারপর আদালতে উঠবে মামলা। সেখানেও যে তাড়াতাড়ি বিচার হবে সে কথা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। অন্তত কমিশনের এই রিপোর্টের পর এই নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে অনেকের মনেই।