রাজনীতিকরা যেন এমন কিছু করে না বসেন, যাতে কেজরির গ্রেপ্তারির মতো ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়। লোকসভার মরশুমে এ কথা বললেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। এ কথা বলে কি আসলে অন্য নেতাদের ঘুরিয়ে বার্তা দিতে চাইলেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দমিয়ে দিতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করছে মোদি সরকার, বিরোধীদের এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুর্নীতি ইস্যুতে একের পর এক বিরোধী নেতারা ইডি-সিবিআইয়ের নিশানায় আসতেই জোরালো হয়েছে সেই অভিযোগ। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা নিঃসন্দেহে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন কোনও নেতার গ্রেপ্তার ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম। এবার সেই প্রসঙ্গ টেনেই মোদির মন্তব্য, আশা করা যায় এ ঘটনা নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে না। অন্য রাজনৈতিক নেতারা এহেন পর্যায়ে যাবেন না যাতে তাঁদেরও কেজরির মতো গ্রেপ্তার হতে হয়। আর এখানেই প্রশ্ন, আশা প্রকাশের ছলে কি আদতে অন্য রাজনৈতিক নেতাদের ঘুরিয়ে বার্তা দিতেই চাইলেন মোদি? বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে বিরোধিতার বাড়াবাড়ি হলে কট্টর হবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের প্রবণতাও? এমনিতেই ভোটে জিতে তৃতীয়বার মসনদে ফেরা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মোদি-সহ বিজেপি শিবির। সেখানে ভোটের মাঝে এহেন বার্তা আসলে বিরোধীদের উদ্দেশে আগাম হুঁশিয়ারি কি না, তা নিয়েই জল্পনা উসকে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও শুনুন:
ভোটের সাপলুডোয় কে জিতবে আপনার হাতেই? মোবাইলে চোখ রাখলেই কেল্লাফতে
যদিও দুর্নীতির কথা বলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহারের সাফাই দিয়েছেন মোদি। বিরোধীদের দাবি, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেই তাদের নিশানা করে ইডি বা সিবিআই। দুর্নীতির অভিযোগে বারবার জেরা, তল্লাশি, এমনকি গ্রেপ্তারি পর্যন্ত চলে লাগাতার। উলটো দিকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউ বিজেপিতে যোগ দিলেই তার সাত খুন মাফ, দাবি করে বিজেপিকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ তকমাও দিয়েছে বিরোধীরা। এই সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়ে মোদির পালটা বক্তব্য, ইডি যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তাদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ রাজনীতিক রয়েছেন। সেখানে বিরোধী দলের অনেকেই যেমন রয়েছেন, তেমনই কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারাও রয়েছেন বলেই দাবি মোদির। শুধু তাই নয়, গত ১১ বছরের তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে মোদির আরও দাবি, ২০১৪-র আগে ইডির বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৫০০০ কোটি টাকা, যা পরবর্তী দশ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ কোটিরও বেশি। মোদি আরও বলছেন, দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি গুরুতর সমস্যা, আর সেই সমস্যা দূর করতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। এই প্রেক্ষিতেই তাঁর আশা, নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের এহেন অধঃপতন না ঘটুক যাতে কেজরির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। যদিও লোকসভা নির্বাচনের চাপানউতোরের মাঝে মোদির এহেন বক্তব্যকে বিরোধীদের উদ্দেশে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বলেই সন্দেহ করছেন বিশেষজ্ঞরা।