ঈশ্বর নন, মানুষের উপরেই বরাবর বেশি আস্থা রেখেছেন এই কংগ্রেস নেতা। তাই মন্ত্রিত্ব পেলেও ঈশ্বরের নামে শপথ নিতে রাজি হননি তিনি। কারণ এই পদক্ষেপ আদতে সম্পূর্ণ ভুল, এমনটাই মত তাঁর। ঠিক কী বলেছেন ওই নেতা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নিজেকে নাস্তিক বলেই ঘোষণা করেন হাত শিবিরের এই বর্ষীয়ান নেতা। আর কেবল কথায় নয়, কথার সঙ্গে কাজেরও মিল রেখেছেন তিনি। তাই নিজের রাজনৈতিক পরিসরেও তিনি ধর্মকে ঢুকতে দিতে নারাজ। সাধারণত মন্ত্রিসভা গঠনের পর ঈশ্বরের নামেই শপথ নেন নতুন মন্ত্রীরা। কিন্তু কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি কোনও দিনই সেই পথে হাঁটেননি। ২০০৯ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন এ কে অ্যান্টনি। কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ঈশ্বরের নামে শপথ নিতে চাননি তিনি। পরিবর্তে তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতের সংবিধান আর আইনের প্রতিই পূর্ণ বিশ্বাস বহন করবেন তিনি।
আরও শুনুন: ‘হিংসা ছড়াতে গোহত্যা হিন্দু সংগঠনের সদস্যদেরই’, যোগীরাজ্যের পুলিশের বক্তব্যে চাঞ্চল্য
বস্তুত তিনি একা নন, সেই সময়ে তাঁর দলে ছিলেন আরও একাধিক মন্ত্রী। মনমোহন সিং-এর তৎকালীন মন্ত্রিসভায় ছজন মন্ত্রী নিজেদের নাস্তিক বলেই ঘোষণা করেছিলেন। এ ছাড়াও বাম দলগুলির নেতারা ঈশ্বরের নামে শপথ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন বরাবরই। ২০২১ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এম কে স্ট্যালিন-ও ঈশ্বরের পরিবর্তে নিজের বিবেকের নামে শপথ গ্রহণ করেন। ৮২ বছরের অ্যান্টনিও একই ভাবনার শরিক।
আরও শুনুন: মোদির পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন সিসোদিয়ার! কেমন ছিল অতীত প্রধানমন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা?
কিন্তু সম্প্রতি তাঁর ভাবনায় আঘাত এসেছে তাঁর নিজের ছেলের কাছ থেকেই। সম্প্রতি বিজেপি শিবিরে যোগ দিয়েছেন তাঁর ছেলে, অনিল। যদিও অনিলের দাবি, “অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই মনে করে যে তাদের আনুগত্য বাঁধা আছে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের কাছেই। কিন্তু আমি মনে করি, সামগ্রিকভাবে মানুষের জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য।” জাতি ধর্মকে ছাপিয়ে যেসব সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেসবকে জাতীয় স্তর থেকে দেখতে চান বলেই দাবি অনিলের। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পক্ষে অনিল যে সাফাই-ই দিন না কেন, আদতে এই পদক্ষেপের সঙ্গে তাঁর বাবার মতাদর্শের যে বিপুল ফারাক রয়েছে, তা নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। গেরুয়া শিবির যেভাবে ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার করে তুলেছে, তা কারোরই অজানা নয়। তাই এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসলে বাবার একেবারেই উলটো পথে হাঁটলেন ছেলে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ছেলের বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়াকে যে তিনি একেবারেই ঠিক কাজ বলে মনে করছেন না, সে কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ কে অ্যান্টনিও।