কলকাতায় এসে স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। তারপর কেটেছে ১৩ বছর। এর মধ্যে নতুন বিয়ে করেননি। শুধু তাই নয়, একইভাবে জারি রেখেছেন স্ত্রীর খোঁজ। অবশেষে খুঁজেও পেলেন। তবে এমন এক জায়গায় পেলেন, যেখানে স্বজন হারানো খুবই চেনা এক ছবি। কেমন সেই কাহিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রক্তের সম্পর্ক না থাকুক। দুজনকে একরকম দেখতে হলেই, বলা হয় সাগরের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই বা বোন। সাম্প্রতিক এক ঘটনা সেই প্রবাদকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে সাগরের মেলা বিচ্ছেদ নয়, মিলন ঘটিয়েছে।
আরও শুনুন: রামচরিত: বাংলার আছে নিজস্ব ‘অযোধ্যা’, এখনও বইছে ক্ষীণস্রোতা ‘সরযূ’
কথা বলছি ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা ললিত বারেথ(Lalit Bareth) সম্পর্কে। ১৩ বছর আগে চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ও একরত্তি সন্তানকে নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন ললিত। অচেনা শহর, অচেনা পরিবেশে দুজনেই তেমন কাউকে চিনতেন না। তার ওপর স্ত্রী গুরবারি-র (Gurbari) ছিল মানসিক সমস্যা। কাজেই তিনিও সম্পূর্ণভাবেই ললিতের উপর নির্ভরশীল। কোনও কারণে কলকাতার রাস্তায় হঠাৎই স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন ললিত। পাগলের মতো খুঁজতে শুরু করেন অচেনা শহরের অলিগলি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। একরাশ মনখারাপ নিয়েই ছত্তিশগড়ের গ্রামে ফিরে যান ললিত। কিন্তু সেখানে গিয়েও স্ত্রী-সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি। নতুন বিয়ে করবেন না বলেই পণ করেন। সেইসঙ্গে ঠিক করেন প্রতি বছর গঙ্গাসাগরের মেলার সময় বাংলায় আসবেন। সেখানেই খুঁজবেন স্ত্রীকে। শুধু কথার কথা নয়, এতদিন ধরে তিনি সত্যিই এমনটা করে গিয়েছেন। স্ত্রীকে হারানোর পর এই নিয়ে ১৩ বার গঙ্গাসাগরের মেলায় পুজো দিতে এসেছেন ললিত। এবং প্রার্থণা করেছেন স্ত্রী-সন্তানকে ফিরে পাওয়ার। চলতি বছরে ললিতের সেই প্রার্থণা সত্যি হয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও, গঙ্গাসাগর মেলার সময় বাংলায় এসেই খুঁজে পেয়েছেন তাঁর হারানো স্ত্রীকে। আর এই কাহিনি অনায়াসে সিনেমার গল্পকেও হার মানাতে পারে।
আরও শুনুন: অখুশি শঙ্করাচার্যরা, মোদির ধর্মাচরণে খুশি কোন ধর্মগুরুরা?
আসলে, সেদিন একরত্তিকে কোলে নিয়েই কোনওভাবে শহরের অন্যপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন গুরবারি। তাই ললিত হাজার খুঁজেও তাঁকে দেখতে পাননি। রাস্তা থেকেই একরত্তি সন্তান সহ গুরবারিকে উদ্ধার করে পুলিশ। একে তো মানসিক সমস্যা ছিল, তার ওপর এই হারিয়ে যাওয়ার ধকল আরও বিধ্বস্ত করে দেয় গুরবারিকে। তিনি সম্পূর্ণ উন্মাদের মতো আচরণ শুরু করেন। বাধ্য হয়েই তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর একরত্তিকে পাঠানো হয় হোমে। ধীর ধীরে সুস্থ হতে থাকেন গুরবারি। এইসময় তিনি শুধু বলতে পারতেন, তাঁর বাড়ির আশেপাশে ব্রোঞ্জের জিনিস তৈরি হয়। ইতিমধ্যেই তাঁর ছবি আর এই ধরনের অসংলগ্ন কথাবার্তার যাবতীয় তথ্য দেশের বিভিন্ন থানায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবু ঠিক কোথায় তাঁর বাড়ি তা ঠাহর করতে পারছিলেন না কেউ। অবশেষে মিলল সেই খোঁজ। এবং তা এমনই এক সময় হল, যখন ললিত নিজেই এসেছেন বাংলায়। ঠিক ধরেছেন, ১৩ তম গঙ্গাসাগর সফরে এসেই স্ত্রী-র খোঁজ পান ললিত। এতদিনে অবশ্য স্ত্রী গুরবারি সম্পূর্ণ সুস্থ। সব মনে পড়তে তিনিও বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। দুই রাজ্যের পুলিশের সহযোগিতায় অবশেষে সম্ভব হয় সেই মিলন। সাগর মেলার প্রাক্কালেই ১৩ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী-কে খুঁজে পান ছত্তিশগড়ের ললিত।