‘বাধ্য হয়ে চুরি করছি’, এমনটা চিরকূটে লিখে গেল খোদ চোর। টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিও দিল। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেজায় শোরগোল পড়েছে। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এ রাম! ভুল করে জিভ কেটে কে না এ কথা বলেছে! তা বলে রামের নাম করে কেউ ভুল করে নাকি! বলতে পারেন, করে, বিলকুল করে। রাজনীতির দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে আকছার রামের নামে ভুল হয়েই চলেছে। তা সেই ঠিক-ভুলের রাম নিয়ে বিতর্ক আপাতত নাহয় তুলেই রাখা গেল। তবে, একেবারে রামনবমীর দিনে যে চোর চুরি করে পালিয়েছে, মাহেন্দ্রক্ষণ নিয়ে তার জ্ঞানে বোধহয় কোনও সন্দেহ প্রকাশই করা চলে না। রাম নামে ভূত পালায়, চোর তো আর পালায় না। অতএব রামনবমীতেই আড়াই লক্ষ টাকা চুরি করে চম্পট দিয়েছে চোর।
তবে মাত্র এটুকু বললে বোধহয় এই বিশেষ চোরের চরিত্রহনন করা হয়। চুরি বললেও তার কাজকে খানিকটা সংকীর্ণ করে ফেলা হয়। বলা যেতে পারে, দেনার দায়ে জর্জরিত ‘অ্যালোন’ ব্যক্তি ‘লোন’ নিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকেও তা নেওয়া যেত। তবে সেখানে অনেক কাগজপত্রের হ্যাপা। ‘কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’ আবার লোন-ও মিল যায়েঙ্গে, এমন অমৃতযোগ আর কোথায় মিলবে! তা একটি সোনার দোকানকেই এ কাজের উপযুক্ত মনে করেছে ওই ব্যক্তি। মোটামুটি আড়াই লক্ষ টাকা দরকার ছিল। সেটুকুই সে নিয়েছে। এমন পরিমিতি বোধ যদি ‘এত কবি কেন’ আক্ষেপের কবিরা মনে রাখতেন, তাহলে কি আর মাত্রায় এত গরমিল হত!
গল্পটা অবশ্য এখনও শেষ হয়নি। সহৃদয় চোর জানিয়েছে যে, মাস ছয়েকের মধ্যে সে এ টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। সত্যি তো, চোর বলে কি তার থেকে সততা আশা করা যায় না! চোর কি আর নেতা-মন্ত্রী, যে, টাকা নিলে তা বেমালুম কপ্পুর হয়ে উবে যাবে। অতএব এই সচ্চরিত্র চোর বাবাজি, নেহাত দায়ে পড়ে যেন সোনা দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে খানিক ধার নিয়েছে। আর চিরকুটে জানিয়ে গিয়েছে যে, ধারশোধ করতে সে বদ্ধপরিকর। এমন বিরল চোরের দেখা পেয়ে মধ্যপ্রদেশের অনেকেই তাজ্জব হয়ে যেন বলছেন, হে রাম!
আর কী আশ্চর্য! এ সবই করা হয়েছে রামনবমীর দিনে। ধর্মীয় উদযাপন পেরিয়ে রামনবমী দিনে দিনে হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক। নেতাদের আছে নিজস্ব রামনবমী! তার ফায়দা নাকি মিলবে ভোটবাক্সে। আবার ভক্তের আছে আলাদা রামনবমী। তা সবারই যদি রাম থাকে, শুধু চোরেরই রাম থাকবে না! তা আবার হয় নাকি! খোদ রামের যিনি জন্ম দিয়েছেন সেই বাল্মীকি তো নিজেই পূর্বাশ্রমে ছিলেন দস্যু রত্নাকর। ‘মরা’ ‘মরা’ করতে করতে রাম হয়ে গেল। দুই ব্যক্তি তো আদতে একই। অতএব বাল্মীকির রাম থাকলে, রত্নাকরেরও তাতে কিছু অধিকার থাকে বটে! আধুনিক রত্নাকর যেন রামের প্রতি সেই দাবি জানিয়েই রামনবমীতেই নিজের কাজটুকু হাসিল করেছে।
সেই কবে রণজিৎ দাশ মন্দিরে যে জুতো চুরি করতে এসেছিলেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘একমাত্র তুমিই জানো মন্দিরে আসার অর্থ, অন্য কেউ নয়।’ এ চোরকেও সে কথা না বলে আর উপায় কী! রামরাজ্য থাকলে কি আর তাকে দেনার দায়ে জর্জরিত হতে হত, নাকি এমন পদক্ষেপ করতে হত! তা, নেই যখন কী আর করা যাবে! নিজে ব্যবস্থা নিজেই করে নেওয়া যে যুগে দস্তুর, সেখানে রামনবমীর দিনের এমন উপযোগিতা চোর ছাড়া আর কে-ই বা খুঁজে বের করতে পারে!
চুরি তো হয়েই গেছে। চোর-পুলিশে ধরাধরি খেলা এখন চলবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এ চোর এখনও পাকড়াও হয়নি। তবে ধার শোধ করে, রত্নাকর থেকে সে বাল্মীকি হয়ে ওঠে কি-না, সেটাই দেখার।