ভালবেসে অনেকেই বলেন, ‘তোমার জন্য চাঁদ এনে দিতে পারি’। কিন্তু সত্যি সত্যি তেমনটা করার জন্য কেউ যদি তিলতলার ছাদ থেকে লাফ দেন, তাহলে বিপদ হতে বাধ্য। যদিও এক্ষেত্রে ঠিক ‘চাঁদ’ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে এমন এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন এই ব্যক্তি, যার দরুন শ্রীঘরে ঠাঁই পেতে হয়েছে তাঁকে। ঠিক কী করেছেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
স্ত্রীকে বড্ড ভালবাসেন। তাই সবসময় তাঁকে খুশি রাখতে চান। তার জন্য মিথ্যে কথা বলতেও আপত্তি নেই। কিন্তু তারও একটা সীমা থাকা উচিত! এই ব্যক্তি সেই মিথ্যে কথার বলারও যাবতীয় সীমা পরিসীমা ভুলেছেন। স্ত্রীর কাছে নিজেকে জাহির করতে, কেন্দ্র সরকারের অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তাও আবার সাধারণ কোনও অফিসার নয়, একেবারে কেন্দ্র সরকারি গোয়েন্দা দফতরের অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আর এতেই হল কাল। ভুয়ো তদন্তকারী অফিসার সাজার অভিযোগে তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে ।
আরও শুনুন: মুসলিম মহিলাদের রাখিতে জড়াতে চান প্রধানমন্ত্রী, সম্প্রীতির রাখিবন্ধন এবার ভোটের অস্ত্র?
কিন্তু তিনি ধরা পড়লেন ঠিক কীভাবে?
ঘটনাটি গুজরাটের। সেখানকার আমরেলি জেলার বাসিন্দা গুঞ্জন হিরেনভাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বছর ৩১-র এই ব্যক্তি স্ত্রীর কাছে নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। যার জন্য প্রথম থেকেই নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন একজন এনআইএ অফিসার হিসেবে। কিন্তু স্রেফ মুখের কথায় চিঁড়ে ভেজেনি। তাই তিনি ঠিক করেন স্ত্রীকে অফিস দেখাতে নিয়ে যাবেন। গুঞ্জন জানতেন এতে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। কিন্তু স্ত্রী-র কাছে নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে। তাই এমনটা না করে উপায় নেই। প্রথমে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার অছিলায় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি হাজির হন কেন্দ্র সরকারের গোয়েন্দা দফতরের সামনে। ভুয়ো আইকার্ড পরেই সেখানে ঢুকতে যান তিনি। ভেবেছিলেন কেউ বুঝতে পারবে না। স্বামীকে অফিসে ঢুকতে দেখে স্ত্রী-ও বেজায় খুশি হন। গাড়িতে অপেক্ষা করতে করতে তিনি ধরে নেন তাঁর স্বামী সত্যিই একজন কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিক। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেই চিত্র বদলে যায়। তিনি দেখতে পান স্বামীকে কার্যত টানতে টানতে অফিস থেকে বের করা আনছেন কয়েকজন অফিসার। এরপরই সামনে আসে আসল সত্যি। আসলে গুঞ্জন ভেবেছিলেন তাঁর ভুয়ো আইকার্ড কারও চোখে পড়বে না। কিন্তু যাঁদের চোখে তিনি ধুলো দিতে চেয়ছিলেন তাঁরা সকলেই সত্যিকারের গোয়েন্দা। অতসহজে তাঁদের ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। অফিসে ঢোকার সময়ই সকলের সন্দেহ হয়েছিল। ভিতরে ঢুকতেই গুঞ্জনকে ধরে ফেলেন ওই গোয়েন্দা দফতরের অয়াধিকারিকরা। সামান্য কিছু প্রশ্ন করতেই সবটা স্বীকার করে নেন গুঞ্জন। এরপরই তাঁকে আটক করেন অফিসাররা।
আরও শুনুন: মন্দির না মসজিদ! ‘জ্ঞানবাপী আসলে বৌদ্ধ মঠ’, দাবি পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টে
প্রাথমিক ভাবে স্ত্রী-কে খুশি করারা যুক্তি মানতে চাননি অফিসাররা। ঠিক কী উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারি অফিসে গুঞ্জন ঢুকেছিলেন তার খোঁজ শুরু হয়। জানা যায়, গুজরাটের এই ব্যক্তি ভিসা কনসালটেন্সিতে কাজ করেন। কিন্তু সেই কাজের পাশাপাশি ভুয়ো আই কার্ড বানাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন গুঞ্জন। তাঁর ডেরা থেকে আরও কিছু সরকারি পরিচয়পত্র আবিষ্কার করেন গোয়েন্দারা। সবগুলিই নকল। স্রেফ সরকারি আমলা নয়, মন্ত্রী বিভাগের কর্মরত অফিসারের ভুয়ো পরিচয়ও সেখানে পাওয়া গিয়েছে। এইসব দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয় গোয়েন্দাদের। জিজ্ঞাসা করায় গুঞ্জনের দাবি, বিভিন্ন কাজে এই ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন তিনি। আপাতত একধিক ধারায় মামলা রজু করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে একইসঙ্গে তদন্ত জারি রেখেছেন গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকরা।