মুসলিম শাসনের সময় দেশের অনেক মন্দির ভেঙেই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল, এমনটা জানায় ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনেই জ্ঞানবাপী ইস্যুতে মুসলিমদের নিশানা করলেন অযোধ্যার এক মহান্ত। দাবি করলেন, পূর্বপুরুষদের ভুল শুধরে নেওয়া উচিত এ কালের মুসলিমদের। ঠিক কী বলতে চাইলেন মহান্ত রাজুদাস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জ্ঞানবাপী আসলে মন্দির না মসজিদ, সেই বিতর্কে সরগরম দেশ। জ্ঞানবাপীতে মন্দিরের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। যে দাবির বিপক্ষে সুর চড়িয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। দুই পক্ষের চাপানউতোর গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। আর মুসলিম পক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও, এই বিতর্কের মীমাংসা করতে জ্ঞানবাপীতে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কড়া নিরাপত্তায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই সমীক্ষাও। এই পরিস্থিতিতেই এবার মুসলিম পক্ষের আপত্তি নিয়ে একহাত নিলেন অযোধ্যার হনুমানগড়ি মন্দিরের মহান্ত রাজুদাস। সুপ্রিম রায়কে স্বাগত জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, পূর্বপুরুষদের ভুল শুধরে নেওয়া উচিত এ কালের মুসলিমদের। খামোখা আদালত থেকে আদালতে আইনি বিতর্ক টেনে সেই প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেওয়া উচিত হচ্ছে না, এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: মন্দির না মসজিদ! ‘জ্ঞানবাপী আসলে বৌদ্ধ মঠ’, দাবি পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টে
আসলে রাজনৈতিকভাবে যদি এক ধর্মের এলাকায় আরেক ধর্মের প্রবেশ ঘটে, তবে দুই ধর্মের মধ্যে খানিক বিরোধ বাধেই। যেমনটা ঘটেছিল এ দেশে মুসলিম শাসন শুরুর সময়ে। বিজিত দেশটিকে সবরকম ভাবেই নিজেদের বশে আনার চেষ্টা করেছিলেন মুসলিম শাসকদের একাংশ। তাই ধর্মান্তরণের প্রক্রিয়া, মন্দির ভাঙা, সবই চলেছিল জোরকদমে। এমনকি বহু মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল মন্দির ধ্বংস করেই। একইভাবে জ্ঞানবাপী মন্দির ভেঙেই মসজিদ গড়া হয়েছিল, এই দাবিতে সরব হিন্দুত্ববাদীরা। আর সেই দাবির সপক্ষেই সওয়াল করেছেন মহান্ত রাজুদাস। মন্দির ভাঙার সেই প্রাচীন ইতিহাসকে মুসলিমদের ভুল বলে দেগে দিয়েছেন তিনি। তাঁর আশা, এএসআই-এর সমীক্ষায় ন্যায়বিচার মিলবে হিন্দু পক্ষের, অর্থাৎ জ্ঞানবাপীকে মন্দির বলেই প্রমাণ করা যাবে। মহান্ত রাজুদাসের বক্তব্য, মুসলিম পক্ষ যে বারবার উচ্চতর আদালতে সমীক্ষা থামানোর আরজি জানিয়েছে, তা না করে সমীক্ষায় সহযোগিতা করাই উচিত ছিল তাদের। যাতে পূর্বপুরুষদের ভুল শুধরে নিয়ে হিন্দুদের মন্দির ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
আরও শুনুন: চাই রাম মন্দিরের পুরোহিতের চাকরি, ধর্মীয় আচার শিখতে ব্যস্ত যোগীরাজ্যের পড়ুয়ারা
জ্ঞানবাপী আসলে মন্দির না মসজিদ, সেই মীমাংসা হয়তো করবে সময়ই। কিন্তু ইতিহাস যেমন মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ার কথা বলে, তেমনই বৌদ্ধ মঠ ভেঙে মন্দির গড়ার নজিরও দেয়। আসলে যে পক্ষ বেশি শক্তিশালী, সে অন্য পক্ষকে হারাতে চায় সবসময়ই। আবার এ দেশ এমনটাও দেখেছে, যে, দুর্বল পক্ষকেই রক্ষা করছে সবল। এই মহান্ত যে হনুমানগড়ি মন্দিরের পূজারি, ইতিহাস জানায়, সেই মন্দির তৈরি করেছিলেন খোদ অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা। আবার মুসলিমরা পরবর্তী কালে এই মন্দিরের দখল নিতে এলে তাদের হঠিয়ে দেয় নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের সেনা। সুতরাং মহান্ত রাজুদাস মুসলিমদের যে ‘ভুল’-এর কথা বলছেন, সেই ভুল নিয়েও খানিক বিতর্কের মুখ খুলে গেল, এমনটা বলাই যায়।