উদ্বোধন হতে না হতেই বিতর্কের কেন্দ্রে উত্তরপ্রদেশের লুলু মল। মলের ভিতরে নমাজ পড়াকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়ল মল কর্তৃপক্ষ। অশান্তির জল গড়াল থানা পর্যন্ত। চাপের মুখে মলের দরজায় সাইনবোর্ড পর্যন্ত টাঙাতে বাধ্য হল কর্তৃপক্ষ। কী লেখা তাতে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দিন কয়েক আগেই মেগা মলটির উদ্বোধন করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই বিতর্ক দানা বাঁধল মলটিকে ঘিরে। সম্প্রতি লুলু মলের ভিতরই নমাজ পড়েন কয়েকজন ব্যক্তি। সেই ছবিই ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তার পরেই মলের মূল দরজা আটকে বিক্ষোভ দেখায় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা-সহ বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দল। এমনকি মলের ভিতরে হনুমান চালিশা পাঠেরও হুমকি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে সে-রাজ্যে নতুন করে অশান্তি দানা বেঁধেছিল লখনউয়ের এই মলটিকে কেন্দ্র করে।
আরও শুনুন: ‘রাজ্যে নীচু জাত কোনটি?’ প্রশ্ন খোদ পেরিয়ারের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়েই, ঘনাল বিতর্ক
চাপের মুখে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিতে বাধ্য হয় মল কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঘটনায় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করে তারা। নমাজ পড়ায় অভিযুক্ত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের হয় এফআইআর। বেশ কয়েকটি গুরুতর ধারায় রুজু করা হয়েছে মামলাও। তবে তাতেও প্রশমিত হয়নি বিতর্ক। মল কর্তৃপক্ষ সব ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু নয় বলেই অভিযোগ তোলে হিন্দুত্ববাদী দলটি। যদিও মল কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট ভাবেই জানানো হয়েছিল, যে কোনও রকম ধর্মীয় কাজকর্মই নিষিদ্ধ মলের ভিতরে।
আরও শুনুন: এক ঘণ্টা আলিঙ্গনের দাম ৭০০০ টাকা, অভিনব ব্যবসা খুলে তাক লাগালেন ব্যক্তি
মৌখিক বিবৃতির পরে সে-কথাই লিখিত আকারে জানিয়ে দিলেন মল কর্তৃপক্ষ। শনিবার সেখানে দেখা গেল একটি সাইন বোর্ড। যেখানে মোটা হরফে স্পষ্ট করে ইংরেজি ও হিন্দিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শপিংমলের অব্যন্তরে কোনও রকম ধর্মীয় প্রার্থনা বা কাজকর্ম করা যাবে না। এর আগে ওই মলের জেনারেল ম্যানেজার সমীর বর্মা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘সব ধর্মকেই সমান সম্মান জানায় লুলু মল। তবে কোনও ধরনের ধর্মীয় প্রার্থনাই মলের ভিতরে কাঙ্ক্ষিত নয়।’ এই বিষয়ে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে মলের সমস্ত নিরাপত্তা কর্মীকে।
শুক্রবার মল চত্বরে দাঁড়িয়ে বাল্মীকি লিখিত ‘সুন্দর কাণ্ড’ পাঠ করার চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁদের আটক করেছে। তাঁরা হিন্দু সমাজ পার্টির সদস্য বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আবহেই বিতর্কের একেবারে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে লুলু মল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীর উদ্যোগেই উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি খোলা হয়েছে মলটি। উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মেগাসিটিতেও রয়েছে তাঁদের মল। নমাজ-বিতর্কের জেরে ব্যবসায়িক দিক থেকে লোকসানের মুখে পড়বে কিনা মলটি, কর্তৃপক্ষের কাছে আপাতত সেটাই সবথেকে দুশ্চিন্তার ব্যাপার।