কুম্ভ মেলায় অ-হিন্দু কেউ দোকান দিতে পারবে না। কিছুদিন আগেই জারি হয়েছে এমন ফতোয়া। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী এই মেলাকে উদ্দেশ্য করে ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন। এও নতুন কিছু নয়, সম্রাট আকবরও এই কুম্ভকে ‘তীর্থের রাজা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তবু কীসের বিদ্বেষ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হাজার নয়, লাখ নয়, একসঙ্গে স্নান সারবেন কয়েক কোটি ভক্ত। সেই সুবাদে কুম্ভমেলাকে সবথেকে জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব বলাই যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই উৎসব কি স্রেফ হিন্দুদের? সরকারের তরফে এমন কোনও নির্দেশ নেই, তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এমন ধারণাই ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
নতুন বছরের শুরুতেই কুম্ভমেলা। ইতিমধ্যেই প্রয়াগে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন সাধু সন্তরা। তৈরি হচ্ছে একের পর এক আখড়া। একইসঙ্গে বিজ্ঞাপনে ঢেকেছে চারদিক। জোরকদমে চলছে মেলার প্রচার। তবে ঠিক মেলার প্রচার বলা ভুল। বিজ্ঞাপনে মূলত লেখা হচ্ছে কিছু সাবধান বাণী! কোনওভাবেই যেন মেলায় অহিন্দু কেউ প্রবেশ করতে না পারে। নাম করেও ইঙ্গিত করা হয়েছে বিশেষ সম্প্রদায়কে। তাদের ভয়ে কেউ যেন পিছিয়ে না আসেন, একথাও বলা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, সামনে থেকেও চলছে এই বিভেদের প্রচার। প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এই তত্ত্ব যে, কুম্ভমেলায় ব্যবসা করবেন স্রেফ হিন্দুরা। কিন্তু এই মেলার ইতিহাসও কি একই কথা বলছে?
একেবারেই না। বরং কুম্ভমেলাকে তীর্থের রাজা বলছেন খোদ মুঘল সম্রাট আকবর। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থেও এই মেলার উল্লেখ মেলে। মোটেও নেতিবাচক অর্থে নয়, বরং কুম্ভমেলাকে একতার মহাতীর্থ বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে সেখানে। এরপর দেশের রাজনীতিতে নানা রদবদল হয়েছে। কুম্ভমেলার সাক্ষী থেকেছে নানা জাতি, নানা ধর্মের মানুষ। বিভেদের রাজনীতি তাকে স্পর্শ করেনি কখনও। অবশ্য এমনটাই তো স্বাভাবিক! যেখানে কুম্ভমেলা হচ্ছে সেই প্রয়াগ সঙ্গম এলাহাবাদে অবস্থিত। এই শহরে মুসলিম জনসংখ্যা নেহাতই কম নয়। তাদের কাছেও কুম্ভ মেলা একইভাবে ঐতিহ্য বহন করে। প্রতিবার মেলায় ব্যবসার জন্য আসেন অনেকেই। স্বতস্ফূর্ত ভাবেই উপার্জন করেন। তবে এবার সেই পথে হয়তো ছেদ পড়তে চলেছে। মাস খানেক আগে, কুম্ভ মেলায় অহিন্দুদের ব্যবসায় আপত্তি জানিয়ে ফতোয়া জারি করে আখড়া পরিষদ। সেই নিয়ে বিস্তর হইচই চলে। তাতে নিজেদের অবস্থান বদলে দেননি হিন্দুত্ববাদীরা। বরং বিজ্ঞাপন আর প্রচারের মাত্রা বাড়িয়েছেন। হিন্দুদের প্রতি তাদের ইঙ্গিত, ভয় না পেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করা। ঠিক কীসের ভয়, তা কোথাও বলা নেই, তবে বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছে না কারও। অথচ এই ইস্যুতে মোদির গলায় প্রথম থেকেই ঐক্যের সুর। কুম্ভমেলাকে সামনে রেখে একতার কথাই বলছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বিবিধতাই কুম্ভের বৈশিষ্ট্য। আমাদের সমাজ যাতে কোনওভাবেই ভাগ না হয়, সে কথাই মোদি বলতে চেয়েছেন কুম্ভকে উদ্দেশ্য করে। অথচ মেলা প্রাঙ্গনে ধরা পড়ছে আলাদা ছবি। উসকানিমূলক প্রচারে বিভেদের বার্তা স্পষ্ট। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বজায় রাখার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছেন না হিন্দুত্ববাদীরা। অথচ এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কোনও পদক্ষেপ নেই। সরকারের তরফে এই ধরনের প্রচারে নিশেধাজ্ঞাও জারি করা হয়নি। সবমিলিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে কুম্ভমেলাকে নিয়ে খানিক ধোঁয়াশাই জন্মেছে বলা যায়। যা আদতে মেটাবে কে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!