পাকিস্তানের শিল্পীরা ভারতে অনুষ্ঠান করতে পারবে না। এমন দাবি নতুন নয়। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতে ব্যান করা হয়েছে পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খানের নতুন ছবি। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান গীতিকার জাভেদ আখতার। কী বলছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিল্পীর কোনও ধর্ম হয় না। শিল্পের কোনও রাজনীতি হয় না। কাঁটাতারের বেড়া পেরোতে প্রয়োজন হয় না অনুমতির। দুই দেশের মধ্যে যেমনই সম্পর্ক হোক, শিল্পের কদরে খামতি থাকেনি কখনও। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সেই ধারণা বদলাতে বাধ্য করছে। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে শিল্প আর রাজনীতির টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ, অথচ সংঘাতের সম্পর্ক সেই শুরু থেকে। কখনও যুদ্ধ, কখনও সমঝোতা, নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে ভারত-পাকিস্তান। বর্তমান সময়টাও ঘটনাবহুল। কিছুদিন আগে দুই দেশে সংঘাত এমনই মাত্রা ছাড়ায়, যুদ্ধ ঘোষণা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। যেভাবেইহোক সে পরিস্থিতি ঠেকানো গিয়েছে। পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই আবহে চর্চায় ফিরেছে দুই দেশের শিল্পের টানাপোড়েন। বরাবরের মতো দাবি উঠেছে, পাকিস্তানের শিল্প সম্পূর্ণভাবে বয়কট করা হোক ভারতে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খানের নতুন সিনেমাটির প্রর্দশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ভারতে।
কিন্তু এই পদক্ষেপ কি সঠিক? প্রশ্ন ছিল বর্ষীয়ান গীতিকার জাভেদ আখতারের কাছে। বিষয়টাকে একবাক্যে উত্তর না দিয়ে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন জাভেদ। তাতেই স্পষ্ট হয়েছে এ বিষয়ে তাঁর মত।
জাভেদ বলছেন, পাকিস্তানের শিল্পীরা এক সময় ভারতে চুটিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। সম্মানের সঙ্গেই তাঁরা এ দেশের দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন তাঁরা। বদলে পেয়েছেন ভালোবাসা। কিন্তু এর উলটোটা আদৌ হয়েছে? লতা মঙ্গেশকরের উদাহরণ টেনে জাভেদ বলছেন, পাকিস্তান কখনও লতাজিকে অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। অথচ এ কথা কে না জানে, পাকিস্তানে লতা মঙ্গেশকরের মতো শিল্পী ঠিক কতটা জনপ্রিয়! এই প্রসঙ্গ ধরেই জাভেদের দাবি, সে দেশের প্রশাসন হয়তো এমন ব্যবস্থা করতেই চায়নি। অথচ ভারতে যখন নুসরত ফতে আলি খান কিংবা নুর জাহানের মতো পাক-শিল্পীরা এসেছেন, আয়োজন ছিল দেখবার মতো। এতে অবশ্য পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কোনও দোষ খুঁজে পাননি জাভেদ। তাঁর কথায়, বিষয়টা বড্ড একপাক্ষিক। লতাজির মতো শিল্পীদের একবারের জন্যও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান করতে না যাওয়া তার উদাহরণ। তবে কি পাক-শিল্পীদের ব্যান করাকে সমর্থন করছেন জাভেদ?
বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়। জাভেদের প্রশ্ন, পাকিস্তানের শিল্পীদের ভারতে ব্যান করলে আখেরে কার লাভ? সে দেশের সেনার কিংবা মৌলবাদীদের? এই প্রশ্নেই স্পষ্ট হয় তিনি আসলে কী বলতে চাইছেন। পাকিস্তান ভারতের শিল্পীদের একবারও আমন্ত্রণ না জানিয়ে যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে, ভারত সেই একই কাজ করলে বিষয়টা আলাদা কিছু হয়তো হবে না। তাতেও ওই মৌলবাদীরাই খানিক জয়ের হাসি হাসবে। যারা এতদিন চেয়েছেন দুই প্রতিবেশী দেশের মাঝে অভেদ্য দেওয়াল তুলতে, তারা যেন সফল হওয়ার পথে আরও একধাপ এগোবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও ভাবতে পারছেন না বলেই দাবি জাভেদের। সেক্ষেত্রে পহেলগাম হামলার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এমনিতে ভারতের শিল্পী মহলের প্রায় সকলেই এর চরম নিন্দার সরব হন। সেই দলের শরিক হিসেবেই জাভেদের স্পষ্ট বক্তব্য, বর্তমান সময়টা অন্যরকম, এখানে আর অন্য কিছু ভাবা উচিত নয়। অর্থাৎ পাকিস্তানের শিল্পীদের ব্যান করার প্রসঙ্গে তিনি যে প্রশ্ন সামনে এনেছেন, সে নিয়ে ভাবনার সময় এটা নয়, জানিয়েছেন শিল্পী নিজেই। তবে তাঁর বিশ্বাস ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাবে। ভারতের প্রতি আচরণ কেমন হওয়া দরকার, তা গুরুত্ব দিয়েই ভেবে দেখবে পাকিস্তান। তখন নাহয় ভারতও নতুন করে ভাববে। তবে বর্তমানে এই নিইয়ে আলাদা কিছু ভাবা বা প্রশ্ন করা চলে না বলেই সাফ জানিয়েছেন বর্ষীয়ান গীতিকার।