রথ উপলক্ষ্যে জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। গর্ভগৃহের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রভুকে শ্রদ্ধা জানানোর ছবি নিজেই পোস্ট করেছিলেন নেটদুনিয়ায়। কিন্তু ওই একই মন্দিরে একেবারে গর্ভগৃহে ঢুকে পুজো দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুটি ছবি পাশাপাশি রেখে নেটিজেনদের প্রশ্ন, দলিত হওয়ার কারণেই কি মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার সুযোগ পেলেন না রাষ্ট্রপতি? বিতর্কে উত্তাল নেটদুনিয়া।
জগতের নাথ জগন্নাথ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তাঁকে দর্শন করার অধিকার পান সকলেই। তাই দেশের রাষ্ট্রপতির যে সে অধিকার থাকবে তা বলাই বাহুল্য। তবে এখানে স্রেফ দর্শনের কথা বলা হয়নি। রাষ্ট্রপতি কেন জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার সুযোগ পাননি, সেই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ সেই সুযোগ পেতে দেখা গিয়েছে দেশের অন্যান্য মন্ত্রীদের। তাই নেটিজেনদের প্রশ্ন, দলিত হওয়ার কারণেই কি এভাবে বঞ্চিত হলেন রাষ্ট্রপতি?
আরও শুনুন: ‘রাষ্ট্রপতি’র স্ত্রী-লিঙ্গ কি ‘রাষ্ট্রপত্নী’? বিতর্কে অধীর-সম্বোধন, ব্যাকরণ কী বলছে?
ঘটনার সূত্রপাত রথের দিন। সারা দেশের মানুষ সেদিন জগন্নাথের আরাধনায় মেতেছেন। দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে জগন্নাথের কাছে আশীর্বাদ চাইতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। দিল্লির এক জনপ্রিয় জগন্নাথ মন্দিরে সকাল সকাল হাজির হন তিনি। পুরোহিতদের সাহচর্যে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তিভরে পুজো দেন জগন্নাথের। পুজো দেওয়ার সেই ছবি নিজেই টুইট করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। সঙ্গে দেশবাসীকে রথযাত্রার শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিতে দেখা গিয়েছিল মন্দিরের গর্ভগৃহের বাইরে দাঁড়িয়ে জগন্নাথকে প্রণাম করছেন রাষ্ট্রপতি। প্রথমে সেই ছবি ঘিরে বিশেষ কোনও বিতর্ক জন্ম নেয়নি। সমস্যা দেখা দেয় বেলা বাড়লে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় আরও এক ছবি। যেখানে ওই একই মন্দিরে পুজো দিতে দেখা যায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও আরও কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। কিন্তু তাঁরা কেউই রাষ্ট্রপতির মতো গর্ভগৃহের বাইরে ছিলেন না। বরং জগন্নাথের একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এমনকি রেলমন্ত্রীকে জগন্নাথ বিগ্রহে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতেও দেখা যায়। এই ছবি দেখার পরই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে থাকেন, রেলমন্ত্রী গর্ভগৃহে ঢোকার সুযোগ পেলেন, অথচ রাষ্ট্রপতি কেন পেলেন না। একযোগে সরব হয় দলিত সংগঠনগুলিও। দুটি ছবি পাশাপাশি রেখে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, স্রেফ দলিত হওয়ার কারণেই কি রাষ্ট্রপতিকে গর্ভগৃহে ঢুকতে দেওয়া হল না? প্রশ্ন, পালটা প্রশ্নে উত্তাল হয় নেটদুনিয়া।
আরও শুনুন: দ্রৌপদী নাম হয়েছিল স্কুলে, নিজের ‘আসল’ নাম জানালেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি
কিন্তু এই আশঙ্কা যে একেবারেই সত্যি নয়, তা পরিষ্কার জানিয়ে দেন খোদ রেলমন্ত্রী। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টির সম্পূর্ণ বাখ্যা দেন তিনি। সেই সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রেলমন্ত্রীর দাবি এই প্রশ্ন একেবারেই অমূলক। বরং সেদিন রাষ্ট্রপতি নিজেই মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে চাননি বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আসলে দিল্লির ওই জগন্নাথ মন্দিরে, দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় গর্ভগৃহে প্রবেশের সুযোগ মেলে। তাও মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য। এছাড়া আর কোনও সাধারণ ভক্ত মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার সুযোগ পান না। ঘটনাচক্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তাঁর সতীর্থরা সেদিন ওই নির্দিষ্ট সময়ে মন্দিরে গিয়েছিলেন বলেই জগন্নাথকে স্পর্শ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এদিকে রাষ্ট্রপতি মন্দিরে গিয়েছিলেন অনেকটাই সকালে। নিয়মানুসারে তখন গর্ভগৃহে ঢোকার অধিকার নেই কারও। তবু রাষ্ট্রপতি চাইলেই সে সুযোগ নিতে পারতেন বলেই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু তিনি তা করেননি। সবার জন্য যা নিয়ম, তা ভাঙতে চাননি রাষ্ট্রপতি নিজেও। তাই গর্ভগৃহের বাইরে দাঁড়িয়েই পুজো দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতির জন্য সবসময় বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে। সেই বাহিনীর বা দলের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতি কাছে যাওয়ার সুযোগ পান না কেউ। এদিনও রাষ্ট্রপতির সুরক্ষার স্বার্থে তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল মাত্র ২ জন পুরোহিতের। তাই এইভাবে দূর থেকে পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি রেলমন্ত্রী নিজেও সেদিন রাষ্ট্রপতির সামনে যাওয়ার সুযোগ পাননি বলেই জানিয়েছেন। তবে এতেও বিতর্কের আঁচ পুরোপুরি নেভেনি।