নয়া সংসদ ভবনে সেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। লোকসভা অধিবেশন শুরু হতেই তা সরানোর দাবি তুললেন এক বিরোধী নেতা। সংসদে সেঙ্গলের বদলে সংবিধান রাখার নিদান দিয়েছেন তিনি। ঠিক কোন যুক্তিতে এই দাবি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সদ্য শুরু হয়েছে ১৮ তম লোকসভা অধিবেশন। এরই মাঝে বিতর্কের নয়া ইস্যু তৈরি। যার কেন্দ্রে রয়েছে সেঙ্গল। নয়া সংসদ ভবন প্রতিষ্ঠার দিন এই ‘রাজদণ্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খোদ মোদি। সেইসময় এই নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচন মিটতেই সেই সেঙ্গল ইস্যু খুঁচিয়ে তুলল বিরোধী শিবির।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বারবার উঠেছে সংবিধানের প্রসঙ্গ। এমনকি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে সংবিধান হাতে নিয়েই বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে ইন্ডিয়া জোটের অধিকাংশ সাংসদও শপথগ্রহণের দিন সংবিধানের ক্ষুদ্র সংস্করণ সঙ্গে রেখেছিলেন। এবার সেই সংবিধানকেই সংসদে রাখার দাবি তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ আর কে চৌধুরী। অবশ্য তিনি স্রেফ সংবিধান রাখতে চেয়েছেন বললে ভুল হবে, তাঁর দাবি সংসদ থেকে সেঙ্গল সরিয়ে সেই জায়গায় রাখা হোক সংবিধানের কপি। এই নিয়ে প্রোটেম স্পিকারকে চিঠিও লিখেছেন সপা নেতা। তাঁর যুক্তি, রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত সেঙ্গল ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। তাই অবিলম্বে লোকসভা থেকে সেঙ্গল সরিয়ে সেখানে গণতান্ত্রিক ভারতের প্রতীক সংবিধান প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন তিনি। এই নিয়ে বিজেপির হয়ে পালটা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ভারতের ইতিহাসে সেঙ্গলের গুরুত্ব ঠিক কতটা সেই প্রসঙ্গ তুলে সপা নেতাকে কটাক্ষ করেছেন যোগীরাজ। একইসঙ্গে বিরোধী শিবির দেশের সংস্কৃতিকে এতটুকু সম্মান দেয় না বলেও দাবি আদিত্যনাথের।
আসলে, সেঙ্গলের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেঙ্গল তামিলনাডুর রাজপরিবারের ঐতিহ্য। সেখানকার রীতি অনুযায়ী, অভিষেকের সময় নতুন রাজার হাতে এই রাজদণ্ড তুলে দেওয়া হত। আসলে, দেশের ক্ষমতা তুলে দেওয়ার প্রতীক হিসেবেই এই দণ্ড ব্যবহার করা হত। এদিকে, দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন পণ্ডিত নেহেরুকে প্রশ্ন করেন, ভারত যে স্বাধীনতা পাচ্ছে তার প্রতীক কী হবে? উত্তর খুঁজতে তখন দেশের শেষ গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর দ্বারস্থ হন নেহেরু। তিনিই নেহেরুকে সেঙ্গল সংস্কৃতির কথা বলেন, এবং পরামর্শ দেন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটনের হাত থেকে এই ‘ধর্মদণ্ড’ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়ার। বাস্তবে এমনটাই হয়। জানা যায়, প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল সেঙ্গল। কিন্তু সেসময় তা পুরনো সংসদ ভবনে তা প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। নয়া সংসদ ভবনে মোদি নিজের হাতে সেটি তা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সেঙ্গলকেই রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে তা সরানোর দাবি তুলছে বিরোধীরা।