বিবাহিত মহিলাদের নিয়োগে আপত্তি সংস্থার। চাকরি পাওয়ার জন্য খুলতে হবে মঙ্গলসূত্র। এমনই শর্ত সংস্থার। কিন্তু কেন? বিতর্কের মাঝে জবাবও মিলেছে। ঠিক কোন যুক্তিতে চাকরির জন্য মঙ্গলসূত্র খোলার শর্ত দিল ওই সংস্থা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চাকরি ক্ষেত্রে যোগ্যতাই মাপকাঠি হওয়া উচিত। ধর্ম, বর্ণ, জাতির ভেদাভেদ চাকরি ক্ষেত্রে থাকা, সংবিধান বিরুদ্ধ। এমনকি কোনও সংস্থা তার কর্মীদের ধর্মীয় আচার পালনেও জোর করে বাধা দিতে পারেন না। অথচ সম্প্রতি আইফোন সংস্থা বিবাহিত মহিলাদের চাকরি দেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছে। গলায় মঙ্গলসূত্র থাকলে কোনওভাবেই চাকরি মিলবে না ওই সংস্থায়।
আরও শুনুন: মঙ্গলসূত্র বিতর্কের জন্ম রাজস্থানের জেলায়, ‘বিভাজন’ কি প্রশ্রয় পেল সেখানে?
লোকসভা নির্বাচনে আগে বিতর্কে কেন্দ্রে ছিল মঙ্গলসূত্র। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যে জোর সমালোচনা করেছিল কংগ্রেস। পালটা দিয়েছিল বিজেপিও। সবমিলিয়ে ঘটনার জল গড়িয়েছিল বহুদূর। ভোট মিটতে আবারও সেই বিতর্ক যেন সামনে এল। তবে এবার কোনও রাজনৈতিক দল নয়। মঙ্গলসূত্র পরায় আপত্তি তুলেছে অ্যাপেলের আইফোন প্রস্তুতকারক সংস্থা ফক্সকন। সম্প্রতি তাঁরা বিশেষ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবিই রেখেছেন, কোনও বিবাহিত মহিলাকে চাকরি দেওয়া হবে না। হলেও তাঁদের মানতে হবে বিশেষ কিছু শর্ত। যার প্রথমেই রয়েছে কোনও ধাতব জিনিস না পরা। এক্ষেত্রে অবশ্যই মঙ্গলসূত্রের কথা উঠেছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে যা বিয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ বিবাহিত মহিলাই মঙ্গলসূত্র পরে থাকেন সবসময়। তা খুলতে বলা অবশ্যই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেবে। যদিও স্রেফ হিন্দুদের ক্ষেত্রে নয়, যে কোনও ধর্মের মহিলাক বা পুরুষকে মানতে হবে এই নিয়ম। স্বাভাবিকভাবেই এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসায় জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংস্থার কাছে এই নিয়ে রিপোর্টও তলব করেছে সরকার। সেখানেই নিজেদের যুক্তির কথা বলেছে ফক্সকন।
আরও শুনুন: মঙ্গল-অমঙ্গলসূত্র! দুর্নীতিকে দূরে ঠেলে ভোট যেন সেই ‘ধর্ম’যুদ্ধ
আসলে, গোটা বিষয়টাই ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে বলে দাবি সংস্থার। তাঁদের নিয়মের কথা সম্পূর্ণ না বলে স্রেফ যেটুকু বিতর্ক তৈরি করবে সেটুকু প্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি সংস্থার। তাঁদের দাবি, বিগত কয়েক মাসে তাঁদের সংস্থায় যত মহিলা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেশরভাগই বিবাহিত। সুতরাং বিবাহিত মহিলাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না এই তথ্য ভুল। তাহলে কি ভুয়ো খবর রটেছে? একেবারেই না। সংস্থার দাবি, তাঁদের নিয়মের কারণ জানলেই সবটা পরিষ্কার হবে। আসলে, এই সংস্থায় যে ধরনের কাজ হয় সেখানে যে কোনও ধাতব জিনিস পরাই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই কর্মীদের কথা ভেবেই এমন নিয়ম চালু করা হয়েছে। বিবাহিত, অবিবাহিত, হিন্দু, মুসলিম সবাইকে এই নিয়ম মানতে হবে। সেক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহিত মহিলাদেরও খুলতে হবে মঙ্গলসূত্র। তবে সেই কাজ তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য নয়। সুরক্ষার কথা ভেবেই এমনটা করার কথা বলেছে সংস্থা। তাঁদের দাবি, এই নিয়ম সরকারেরও অজানা নয়। যে কোনও সংস্থাকেই বেশ কিছু সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাতে কড়া নজর থাকে সরকারেরও। সেই কারণে এই ধাতব জিনিস না পরার নিয়ম জোর দিয়ে মানার কথা বলেছে ফক্সকন। কোনও বিবাহিত মহিলা নিয়ম মানতে না চাইলে তাঁকে চাকরি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে সংস্থার কোনও স্বার্থ জড়িয়ে নেই। পুরোটাই ওই কর্মীর সুরক্ষার স্বার্থে, সাফ জানিয়ে দিয়েছে ফক্সকন। তবে মঙ্গলসূত্রকে কেন্দ্র করে এই নিয়ম যে অনেকের কাছেই বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।