তাঁদের সকলেরই আরাধ্য স্বয়ং রাম। সেই রাম কি তাঁদের জমি-বাড়ি কেড়ে নিতে পারেন? এই প্রশ্নেই অযোধ্যায় বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে সেই হারের জন্য আবার অয্যোধ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা শুরু করেছেন দেশের বহু মানুষ। ফলত মার খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসা। পাশে রামলালা থাকা সত্ত্বেও অযোধ্যা যেন তাই নতুন সংকটে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কদিন আগেও দিনে ৮০০ টাকা অনায়াসে রোজগার হত। ভোটের ফল বেরনোর পর, এই কদিনে তা কমে হয়েছে ২০০-২৫০। আর জন্য লোকসভার ফলাফলকেই দুষছেন অযোধ্যার রিক্সাচালকরা। যেভাবে অয্যোধ্যার মানুষকে দুষছেন আরও বহু মানুষ। রাম মন্দির হওয়ার পরও কেন সেখানে বিজেপি হারল, এই প্রশ্নেই ক্রমশ জমা হয়েছে ক্ষোভ। আর সেই কোপ পড়ছে মন্দিরনগরীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর।
রামমন্দিরকে সামনে রেখে ভোটবাক্স ভরাবে বিজেপি! ভোটের আগে এমনই প্রচার চালিয়েছিলেন বিরোধীরা। তবে, সে কথায় বিচলিত না হয়ে, রাম জন্মভূমি ঢেলে সাজিয়েছিল মোদি সরকার। মন্দির প্রতিষ্ঠার বহর গোটা বিশ্ব দেখেছিল। রাতারাতি অযোধ্যায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। একটাই উদ্দেশ্য, রামমন্দিরে রামলালার দর্শন। লাভের মুখ দেখেন অযোধ্যার ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা। হোটেল থেকে শুরু করে রিক্সা, অটো সবকিছুর চাহিদা তুঙ্গে। খানিকটা হলেও বেড়েছিল রোজগারের সুযোগ। শুধু তাই নয়, রামমন্দিরের প্রতীক, রামলালার ছবি, এইসব বিক্রি করেও বেশ ভালোই রোজগার করছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু এই ছবি রাতারাতি বদলাতে শুরু করে ফলাফল ঘোষণার পর। অযোধ্যা কেন্দ্রেই হার স্বীকার করতে হয় বিজেপি-কে। এর জন্য পরাজিত বিজেপি প্রার্থী যত না কষ্ট পেয়েছেন, তার কয়েকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা। অন্তত তাঁদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মোটের উপর সকলেই এই হারের দায় চাপিয়েছেন অযোধ্যাবাসীর উপর। কেন রামমন্দির তৈরি কিংবা এত সুবিধা পেয়েও বিজেপি ভোট দেয়নি সেখানকার মানুষ, সেই প্রশ্নই উঠছে। এমনকি কয়েকজন বিজেপি নেতা, অযোধ্যাবাসীকে ‘গদ্দার’ আখ্যাও দিয়েছেন। কেউ কেউ অযোধ্যাকেই বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে অয্যোধ্যায় বিজেপির এই হারের নেপথ্যেও আছে সাধারণ মানুষের কষ্ট। ইতিমধ্যেই নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য, রামপথ নির্মাণের যেভাবে মানুষের ঘর ভাঙা হয়েছে, সেই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে ভোটের বাক্সে। যে দলিত নেতা অযোধ্যায় জিতেছেন, তিনিও এই কারণের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। মন্দির প্রতিষ্ঠা একদিকে যেমন অযোধ্যাকে সমৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেবে বলে মনে করা হয়েছিল, তার পাশাপাশি প্রদীপের নিচে ছিল অন্ধকারও।
আপাতত ফলাফলের দরুণ শাঁখের করাতেই পড়েছেন অযোধ্যার মানুষ। এক তো সংকটের কারণেই তাঁরা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। উলটোদিকে সেই প্রত্যাখ্যানের কারণে আবার নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও যাঁরা রামলালার দর্শন পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠতেন, তাঁরাই বিজেপি হারের পর অযোধ্যা ট্যুর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলত এক ধাক্কায় রোজগার কমেছে বহু মানুষেরই। রোজগার কম হওয়া সমস্যার, তবে হঠাৎ করে রোজগার কমে যাওয়া আরও বেশি সমস্যার। এই মুহূর্তে অযোধ্যার ছোট ব্যবসায়ীদের সেই অবস্থাই হয়েছে। এই কদিনে রামমন্দির ছাড়াও অযোধ্যায় নানা পর্যটন ক্ষেত্রে গড়েছিল বিজেপি। অযোধ্যায় গেলে সেসবও ঘুরে দেখেন সকলেই। তার জন্য ভরসা ই-রিক্সা। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর এইসব রিক্সাচালকরা দিনে ৮০০ টাকা অবধি রোজগার করতেন। কেউ কেউ আরও বেশি। কিন্তু লোকসভার ফল ঘোষণার পর থেকে দিনে ২৫০ টাকা উপার্জন করতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ অযোধ্যার রিক্সাচালকদের। একই অবস্থা আরও অনেকের। এবং তাঁদের দাবি, এইভাবে রোজগার কমতে পারে আরও অনেকের। বিশেষ করে, রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর যারা অযোধ্যায় হোটেল ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন, এমনটা চলতে থাকলে তাঁরাও লোকসানের মুখ দেখবেন। সুতরাং লোকসভার ফলাফল নিয়ে আদতে খুশি নন অযোধ্যার ব্যবসায়ীদের একাংশ। রাজনীতির কারণে রোজগার কমে যাওয়া কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না তাঁরা। যেভাবে রাজনীতির কারণে বাড়িঘর ভাঙা বা ব্যবসা চৌপাট হওয়া মানতে পারেননি অযোধ্যার ভোটাররা। সব মিলিয়ে অযোধ্যা যেন এখন এক নতুন সংকটের মুখেই। তবে তার থেকে মুক্তি কোন পথে, রামপথের সামনে দাঁড়িয়ে এখনই তা বুঝতে পারছেন না, কোনও অযোধ্যাবাসীই।