লোকসভা ভোটে অযোধ্যায় জিতেছেন দলিত নেতা অওধেশ প্রসাদ। তাঁর হাত ধরেই যেন বিভাজনের রাজনীতির মাঝে সমদৃষ্টি ফিরেছে রামরাজ্যে। সম্প্রতি লোকসভায় শপথ নেওয়ার সময়ও দুই দলিতের নাম নিয়েছেন অওধেশ। কাদের কথা বলেছেন সমাজবাদী পার্টির এই নেতা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের আগে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা। এই নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধী শিবিরের অনেকেই। অভিযোগ, মন্দির প্রতিষ্ঠাকে সামনে রেখে ভোটবাক্স ভরাবে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করেও অযোধ্যায় পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির। বিপুল ভোটে জিতেছেন সমাজবাদী পার্টির দলিত নেতা অওধেশ প্রসাদ। সেইসময় তাঁকে নিয়ে কম চর্চা হয়নি। এবার শপথ অনুষ্ঠানেও দুই দলিতকে মনে করালেন অওধেশ।
আরও শুনুন: রামের জন্য ব্যবসা বেড়েছিল, বিজেপির হারে জোর ধাক্কা! নতুন সংকটে গোটা অযোধ্যা
ভোটের ফল ঘোষণার পর অনেকেই দলিত নেতার পরিচয় নিয়ে অনেকেই আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। জানা যায়, সপা-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম এই দলিত নেতা। ৯ বার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। জরুরি অবস্থার সময়ে হাজতবাসও করতে হয়েছে এই নেতাকে। অওধেশ ‘পাসি’ সম্প্রদায়ের অংশ। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় দলিত সম্প্রদায়ের এই বিশেষ শ্রেণীর বাস। সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় পাসি সম্প্রদায়ের আরও দুই সদস্যের নাম করেন অওধেশ। একজন ‘বীরাঙ্গনা’ উদা দেবী, অন্যজন ‘মহারাজা’ বিজলি পাসি। নামের আগে বীরাঙ্গনা আসলে উপাধি। যা বিশেষ কৃতিত্বের জোরেই অর্জন করেছিলেন উদা দেবী। পাসি সম্প্রদায়ের সকলেই তাঁকে রীতিমতো শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। অবশ্য দেশের জন্য তিনি যা করেছেন, তাতে এমনটা করাই স্বাভাবিক। জানা যায়, ১৮৫৭ সালে হওয়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন উদা দেবী। ইংরেজ শাসকের চোখে চোখ রেখে সম্মুখ সমরেও নেমেছিলেন বহুবার। এমনই এক যুদ্ধে গাছের আড়াল থেকে প্রায় ৩ দজন ব্রিটিশ সৈন্যকে নিকেশ করেছিলেন উদা দেবী। পরে অবশ্য ধরা পড়ে ব্রিটিশদের হাতেই প্রাণ দেন। কিন্তু দেশের সেবায় তাঁর এই অবদান পাসি সম্প্রদায়ের কেউ ভোলেননি। মহারাজা বিজলি পাসিও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দলিতদের অধিকারের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছেন তিনি। বিজলি পাসি অবশ্য প্রকৃত অর্থেই দলিতদের রাজা ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে একাধিক কাহিনি রয়েছে। যা পাসি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মুখে মুখে ফেরে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও বিজলি পাসি-র স্মরণে বেশ কিছু জায়গার নামকরণ করেছেন। এবার সংসদেও উঠল এই দুই দলিত মহানুভবের নাম।
আরও শুনুন: রামের অযোধ্যায় জিতলেন একজন দলিত নেতা, কে এই অওধেশ প্রসাদ?
আসলে, রামরাজ্যে বিজেপির ব্যর্থতা মোটেও ভালোভাবে নেয়নি দল। সমর্থকরাও এর দায় অযোধ্যার মানুষের ঘাড়েই চাপিইয়েছেন। নেটদুনিয়ায় অযোধ্যার বাসিন্দাদের উদ্দেশে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বহু ভক্ত। এমনকি রামমন্দির দর্শনে অযোধ্যা যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে ভোটের ফল বেশ প্রভাব ফেলেছে রামরাজ্য অযোধ্যায়। অবশ্য অযোধ্যাবাসী বিজেপিকে পছন্দ না করার কারণ হিসেবে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁদের কথায় এটুকু স্পষ্ট যে, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য রামপথ নির্মাণে যেভাবে মানুষের ঘর ভাঙা হয়েছে, সেই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে ভোটের বাক্সে। অযোধ্যার জয়ী দলিত নেতা অওধেশ প্রসাদও এই কারণের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। একইসঙ্গে শপথ অনুষ্ঠানে দুই দলিতের নাম উল্লেখ করে সকলের নজড় কেড়েছেন অওধেশ।