বহুবার সমাজের ডাকে বদলের কাজে এগিয়ে এসেছেন পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের আন্দোলনের সেই ঐতিহ্য ফিরেছে বাংলায়। তা হয়তো সমালোচনার অতীত নয়। তবে, তা যে গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ।নেই। হয়তো এই সময়ের বাস্তবতার দু’পিঠ এঁকে রাখছেন বর্তমানের কোনও শিল্পী। ভাবীকাল তার সাক্ষী থাকবে।
চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলন এই মুহূর্তে বাংলায় খবরের শিরোনামে। সুবিচারের দাবিতে, দুর্নীতি মুক্ত করার প্রয়াসে তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের কর্মসূচি। এই কিছুদিন আগেও এমনটা যেন ভাবা যেত না। মনে হত, সময়টা স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক। ফলত, পুরনো সেই অধিকার বুঝে নেওয়ার দিন এখন হয়তো আর ফিরবে না। তবে, মর্মান্তিক এক মৃত্যু ধাক্কা দিয়েছে গোটা সমাজের চেতনায়। আর তাই আবারও জন্ম নিয়েছে নাগরিক আন্দোলন। যার সাক্ষী থাকছে রাজ্য। তথাকথিত দলীয় রাজনীতির বাইরে, এই যে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন তা নানা কারণেই।গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির অ্যাজেন্ডা ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষ যে নিজেদের কথা বলতে পারেন, তাঁরা যে কেবল ভোটবাক্স নন, এ যেন তারই বার্তা। আর সে বার্তা শুধু শাসকদলের প্রতি নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই প্রতি।
আরও শুনুন:
ধর্ষণ-সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, হিন্দি সিনেমার চোখ খুলবে তো?
এই আন্দোলনেরই একটি অংশ ছিল চিকিৎসক পড়ুয়াদের কর্মসূচি। তাঁরা ছাড়াও রাজ্যের বহু পড়ুয়াই অংশ নিয়েছেন নাগরিক নানা কর্মসূচিতে। আজ যাঁরা পড়ুয়া, তাঁদের মেধা-শ্রম-কল্পনার জেরে প্রতিষ্ঠা পাবে আগামীর দেশ। ফলত, নেতাদের আন্দোলনের থেকে, তাঁদের সমাজ শোধনের ডাক অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। এই ঐতিহ্য বাংলার বরাবরই। স্বাধীনতা সংগ্রামে হাজার হাজার পড়ুয়া অংশ নিয়েছেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক যখন দেশের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল, তখনো মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন পড়ুয়ারা। এই বাংলায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার পড়ুয়া স্কুল-কলেজ ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে। তাঁদের এই কাজে সেদিন সন্তুষ্ট ছিলেন না আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। পড়ুয়াদের শিক্ষাঙ্গন ত্যাগকে জাতীয় বিপর্যয় মনে করছিলেন তিনি। নানা ভাবে বোঝাচ্ছিলেন। তবে, ততক্ষণে আন্দোলন তুঙ্গ স্পর্শ করেছে।
আরও শুনুন:
অন্ধকার সময়ের গান! আন্দোলন যদি নতুন সুরের জন্ম না দেয়, তবে ‘আর কবে’?
অসহযোগকে মন থেকে সমর্থন করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বিশ্বমৈত্রী ভাবনার একেবারে উলটোদিকে এই আন্দোলন। ফলত শান্তিনিকেতনে এর ঢেউ লাগলে কবি বিচলিত হয়ে পড়েন। তবে, তাঁর ভূমিকাও সমালোচনার বাইরে ছিল না। দেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, তিনি তখন বিদেশে। গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর আঁকলেন ব্যঙ্গচিত্র। চেয়ারে বসে কবি ভাসছেন আকাশে। সূক্ষ্ম সমালোচনার তির লুকিয়ে ছিল সে ছবির ভিতরে। যেমন, সেই সময়ের বাস্তবতাকে আরও এক কার্টুনে ধরেছিলেন গগন ঠাকুর। দেখা যাচ্ছে, দেশবন্ধু তাঁর চুরুট ধরিয়ে, দেশলাইয়ের আগুন তুলে দিচ্ছেন পড়ুয়াদের হাতে। যেন সেই আগুন পড়ুয়ারা বইপত্রে দেন। অসহযোগের প্রেক্ষিতেই এই চিত্রের জন্ম। যেন, পুরো বিষয়টি নেতার কাছে চুরুট ধরানোর মতোই উপভোগ্য। একটি ঘটনার দুটো দিকই এই ভাবে যেন ধরা পড়ে গিয়েছিল দুই ব্যঙ্গচিত্রে।
তবে, মনে রাখার মতো ঘটনা হল, সেদিন পড়ুয়াদের অংশগ্রহণ। রবীন্দ্রনাথ পছন্দ না করলেও তাঁর পরিচিত বৃত্তের বহু মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন আন্দোলনে। দেশবন্ধু যাঁদের ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে জানিয়ে গেলেন গগন ঠাকুর, তাঁরাও তো পড়ুয়াই।
আরও শুনুন:
ব্যাগ ছাড়াই স্কুলে, হবে না পড়াশোনা! পড়ুয়াদের চাপ কমাতে নয়া প্রস্তাব কেন্দ্রের?
পরবর্তী কালে দেখা গেছে, বহুবার সমাজের ডাকে বদলের কাযে এগিয়ে এসেছেন পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের আন্দোলনের সেই ঐতিহ্য ফিরেছে বাংলায়। তা হয়তো সমালোচনার অতীত নয়। তবে, তা যে গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ।নেই। হয়তো এই সময়ের বাস্তবতার দু’পিঠ এঁকে রাখছেন বর্তমানের কোনও শিল্পী। ভাবীকাল তার সাক্ষী থাকবে।
(তথ্যঋণ: ভারতে রাজনৈতিক কার্টুন চর্চা, সুমিত ঘোষ)