সেই অর্থে প্রভাবশালী নন। রাজনৈতিক পরিচিতিও নেই বললেই চলে। তার ওপর প্রচারও সারেননি সেইভাবে। ভোটে দাড়িয়েছিলেন নির্দল হিসেবে। কিন্তু ফল বেরোনোর সময় দেখা গেল, তাঁর ঝুলিতে হাজার হাজার ভোট। কোন ম্যাজিকে এমনটা হল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গীতায় বলছে, ফলের আশা না করে কাজ করে যাও। অর্থাৎ কাজ করলেই যে তক্ষুনি ফল মিলবে এর কোনও মানে নেই। অতএব কাজ না করলে ফল মিলবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাইতো ভোট যত এগিয়ে আসে কাজের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন নেতারা। রাতারাতি এলাকায় তৈরি হয়ে যায় নতুন রাস্তা। জলের কল থেকে ঘরে ঘরে বিদ্যুত, ভোট এলে এইসবও আসে।
আরও শুনুন: অঙ্কে থাকে ভোটব্যাঙ্কের হিসাব, তবু কমল মহিলা ও সংখ্যালঘু সাংসদের সংখ্যা
যদিও সবই ভোটের টানে। কাজ করলে খুশি হয়ে ভোট দেবে জনতা। তাতে আখেরে নেতার লাভ। একবার জিততে পারলেই কেল্লাফতে। তারপর জনতার কথা না ভাবলেও চলবে। আগামী কয়েক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত। সবাই অবশ্যই এক নন। তাও মোটের উপর এমনটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। সে অবশ্য আলাদা প্রসঙ্গ। ভোট এলে প্রচারে খামতি রাখতে চান না কোনও দলের নেতাই। ফলাফল যাই হোক, প্রচার সারতেই হবে জোরকদমে। কোনও কোনও প্রার্থী নিশ্চিত হার জেনেও প্রচার সারেন। সকলকে প্রতিশ্রুতি দেন ক্ষমতায় এলে অমুক কাজ করে দেবেন। কেউ আবার নিশ্চিতভাবে জানেন, তিনিই জিতবেন। তাও প্রচারে বেরোন। প্রতিশ্রুতিও দেন একইভাবে। ব্যতিক্রম তামিলনাড়ুর এস সেল্ভারেজ। বছর ৩৪-র এই ব্যক্তি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য নেতাদের মতো কোনও প্রচার তিনি করেননি। এমনকি নিজেও ভেবেছিলেন ভোট পাবেন হাতে গোনা কয়েকটা। কিন্তু ফল বেরোতেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। নির্দল হিসেবে প্রায় ১৫হাজার ভোট ঝুলিতে ভরেছেন সেলভারেজ। তিনিও নিজেও ভাবতে পারেননি এমনটা কীভাবে সম্ভব হল। এদিকে ভোটগণনায় কোনও ভুল নেই। ভোটও হয়েছে স্বচ্ছভাবেই। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পাওয়া গেল। আসলে, গোলমাল গণনাযন্ত্রে নয় ভোটের প্রতীকে। ন্যম অনুযায়ী, ইভিএম-এ কোনও প্রার্থীর ছবি থাকে না। দলীয় প্রতীক মিলিয়ে ভোট দিতে হয়। সেক্ষেত্রে দুটি দলের প্রতীক যদি একরকম দেখতে হয়, তাহলে ভোটারদের বিভ্রান্তি হওয়াই স্বভাবিক। এখানেও ঘটেছে ঠিক তেমনটাই। সেল্ভারেজের প্রতীক আর স্থানীয় এ দলের প্রতীকে বেশ মিল ছিল। তাতেই ভুল বুঝে সেলভারেজকে ভোট দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যার দরুন কোনও রকম প্রচার না করেই বিপুল ভোট ঝুলিতে ভরেন সেলভারেজ।
আরও শুনুন: প্রতি ভোটের দাম ১৪০০ টাকা, ঘাটতি মেটাতে দাম বাড়ছে কোন কোন জিনিসের?
একইভাবে মহারাষ্ট্রের এক প্রার্থীও প্রতীকের জোরে ভোটবাক্স ভরিয়েছেন। যদিও সেই কেন্দ্রে জয়লাভ করেছে বিজেপি। কিন্তু প্রতীকের গেরোয় জনপ্রিয় এনসিপি দলকে জোর টক্কর দিয়েছেন এক নির্দল প্রার্থী। এমনিতে এনসিপির প্রতীক হিসেবে সানাই বাজাচ্ছে এমন মানুষের ছবি দেখা যায়। এদিকে নির্দল প্রার্থীর প্রতীক ছিল শুধু সানাই। তাতেই প্রায় এক লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন ওই প্রার্থী। এদিকে এনসিপি প্রার্থীর দাবি, ভোটাররা অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে নির্দল প্রার্থীকে অত ভোট দিয়েছেন। এই নিয়ে কমিশনের দপ্তরে অভিযোগও জানিয়েছিলেন তিনি। তাও নির্বাচনে যা হওয়ার হয়েছে। প্রতীকের গেরোয় পড়ে কার্যত ভোটবাক্সে টান পড়েছে ওই দলের, আর সেই লাভের গুড় খেয়েছেন ওই নির্দল প্রার্থী।