গান গেয়ে প্রতিবাদ জানানোই নেশা। সেটাকেই পেশা বানিয়েছিলেন যুবক। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললেই মুশকিল। শাস্তি হিসেবে বন্ধ করা হবে প্রতিবাদীর মুখ। এক্ষেত্রেও ঘটেছে তেমনটাই। র্যাপারকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে ইরান সরকার। কোন অপরাধে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গানের ভাষা বরাবর প্রতিবাদের কথা বলে। তাই ক্ষমতা চায় সে ভাষা দমিয়ে রাখতে। এমনি লেখা কেউ পড়ুক না পড়ুক, গান শুনবেন অনেকেই। তাই গানের মাধ্যমে সব ভুল সামনে চলে আসবে। তা সবাই কেন মেনে নেবেন? বিশেষ করে যাদের ভুল, তারা কখনই চাইবেন না সবাই সবটা জানুক! তাই যেখানেই গানের ভাষায় প্রতিবাদ শোনা গিয়েছে, চেষ্টা করা হয়েছে তা বন্ধ করার।
আইনের পরিভাষায় রাষ্ট্রদ্রোহ ভয়ঙ্কর অপরাধ। এমনটা করলে মৃত্যুদণ্ডের সাজা অবধি শুনতে হতে পারে। এবার কোনটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ সেটাও যদি ঠিক করে রাষ্ট্রই, তাহলে প্রতিবাদ করলেই শাস্তি পাওয়া বাঞ্ছনীয়। ইরানের জনপ্রিয় র্যাপার তোমাজ সালেহি-ও সেই গেরোয় পড়েছেন। প্রতিবাদ মানেই যে অপরাধ সে কথা বেমালুম ভুলে গান গেয়েছিলেন। বলা ভালো, প্রতিবাদ করেছিলেন। যার জন্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয় তাঁকে। দীর্ঘ ১৮ মাস কাটাতে হয় জেলেই। হীরক রাজ্য হলে হয়তো প্রাণে রক্ষা পেতেন। স্রেফ মগজ ধোলাই যন্ত্রে ঢুকিয়ে ছেড়ে দেওয়া হত। গান গাইতেন ঠিকই, তবে তাতে প্রতিবাদ থাকত না। কিন্তু ইরানে সে যন্ত্র নেই। তাই র্যাপারকে মৃত্যুদণ্ডের সাজাই শুনতে হয়েছে। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। শাস্তি মুকুবের জন্য আবেদন জানিয়েছেন র্যাপার। তাঁর সাজার বিরুদ্ধে কথাও বলেছেন অনেকেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কী এমন প্রতিবাদ, থুড়ি অপরাধ করেছিলেন তোমাজ?
ফিরে যেতে হবে ২০২২ সালে। পুলিশি হেফাজতে ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু। উত্তাল গোটা ইরান। বিক্ষোভ রুখতে সবরকম চেষ্টা চালায় সরকার। পুলিশের গুলিবৃষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ায় ৭৫। আহতও হন অসংখ্য। হিজাব বিতর্কের সেই আঁচ ছড়িয়েছিল গোটা বিশ্বে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভেসে আসে প্রতিবাদের গর্জন। সেই আগুন নিভতে সময় লেগেছিল যথেষ্ট। এরপরও এই নিয়ে খবর করার জেরে কারাদণ্ডের সাজা পান ইরানের দুই মহিলা সাংবাদিক। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ষড়যন্ত্র করে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার। তোমাজও সেই দোষেই দোষী। তিনি অবশ্য খবর করেননি। রাস্তায় নেমে কাউকে মারধরও করেননি। স্রেফ গান গেয়েছিলেন। হিজাব না পরার অপরাধে মাহাসার পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে র্যাপ লেখেন। সেইসময়কার প্রতিবাদে সমর্থনও জানান। এই অপরাধেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘাড়ে চাপে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়। এবার সেই অপরাধেই তাঁকে মৃত্যু দণ্ডের সাজাও শুনতে হল। তবে শেষমেশ কী হয় তা এখনও বিচারাধীন।