অপরাধের তালিকা বেশ লম্বা। খুন থেকে শুরু করে অপহরণ, কী নেই তাতে। আপাতত ঠিকানাও গারদের ওপারে। কিন্তু তাতে কী! প্যারোলে ছুটি নিয়েই নির্বাচনের প্রচারে নেমেছেন বিহারের ‘ছোটে সরকার’। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাজনীতি আর অপরাধ! নির্বাচনের আবহে এই শিরোনামে একাধিক খবর সামনে আসছে। কোথাও অভিযুক্ত ব্যক্তির টিকিট পাওয়া নিয়ে বিতর্ক, কোথাও আবার জেলে থেকেই ভোটে লড়ছেন নেতা। প্রচারের ক্ষেত্রেও বিতর্কের অন্ত নেই। জেলে রয়েছেন, এমন দাগী আসামীও প্রচার করছেন দাপটের সঙ্গে।
আরও শুনুন: স্বাধীনতার পর থেকে যাননি কোনও প্রধানমন্ত্রী, মোদি পুজো দিয়ে এলেন সেই মন্দিরেও
কথা বলছি বিহারের অনন্ত কুমার সিং সম্পর্কে। সবাই অবশ্য ‘ছোটে সরকার’ নামেই তাঁকে চেনে। এই মুহূর্তে ৫২ কেসে অভিযুক্ত বিহারের অনন্ত। তার মধ্যে রয়েছে খুন, অপহরণ থেকে শুরু করে UAPA-র মতো অপরাধ রয়েছে। সেই অনন্ত কুমার এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন নির্বাচনের প্রচারে। তার জন্য জেল থেকে প্যারোলে মুক্তিও পেয়েছেন। বিহারে এই মুহূর্তে নীতিশ কুমার সরকার, জে ডি ইউ। অনন্ত প্রচারে নেমেছেন সেই দলের হয়েই। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে সরব বিরোধীরা। অভিযোগ, অনন্তর মতো ‘বাহুবলী’-কে অন্যায় ভাবে প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে চর্চায় ফিরেছে অনন্তর অপরাধের তালিকাও।
আরও শুনুন: ফুচকা খেলেই সারবে পেটের রোগ! ব্যাপারটা কী?
শুধু প্রচার নয়, একসময় প্রার্থীও ছিলেন অনন্ত। ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ২০২০ সালে। সেইসময় নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গিয়েছিল, অনন্তর বিরুদ্ধে প্রথম ক্রিমিনাল কেস হয়েছে ১৯৭৯ সালে। অপরাধ ছিল খুনের। এরপর একে একে আরও অপরাধ করেছেন অনন্ত। সেই সময় মোট ৩৯ কেস ছিল অনন্তর বিরুদ্ধে। অনেকেই মনে করতেন, এই সংখ্যাটা আরও বেশি। কিন্তু আশ্চর্যভাবে এর মধ্যে মাত্র দুটি ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাকি ঘটনার মধ্যে বেশিরভাগেরই চার্জশিট অবধি পেশ করা হয়নি। যে দুই ঘটনায় অনন্ত দোষী সব্যস্ত হয়, তার প্রথমটি ২০১৫ সালের। খুনের অভিযোগ পেয়ে অনন্তর বাড়ি তল্লাশি করতে যায় পুলিশ। উদ্ধার হয় বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। পরদিনই অনন্তর এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পুতুস যাদব নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ। ঘটনার দায় অনন্তর ঘাড়েই চাপে। পরের ঘটনাটি ২০১৯ সালের। এবারও অনন্তর বাড়ি তল্লাশি করে গ্রেনেড সহ ভারী বন্দুক পাওয়া যায়। যদিও সেবার পুলিশ তাঁকে আটক করতে পারেনি। পরে আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় অনন্ত। এই দুই ঘটনার জন্যই জেলে যেতে হয়েছে। তবে বেশিদিন গারদের ওপারে আটকে রাখা যায়নি ছোটে সরকারকে! অনেকেই মনে করেন, শাসকদলের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের সুবাদেই এত ক্ষমতা। যদিও ২০২২ সালে আদালত অনন্তকে ১০ বছরের সাজা শুনিয়েছে। সেই মোতাবেক বর্তমানে অনন্ত জেলবন্দী। কিন্তু এতেও খুব একটা হেরফের হচ্ছে না তা জীবন যাপনে। আগের মতো দাপটের সঙ্গেই নির্বাচনের প্রচার সারছেন। আপাতত বিহারের মুঙ্গের লোকসভার জেডিইউ প্রার্থীর জন্য প্রচারে দেখা যাচ্ছে অনন্তকে। আগামী ১৩ মে বিহারের ওই কেন্দ্রে ভোট। অনন্ত জেলে ফিরবেন তারপর। কাজেই এই কেন্দ্রে ভোটের ক্ষেত্রে তার প্রভাব কতটা থাকবে সেই নিয়ে আশঙ্কায় বিরোধীরা। এমনিতে নির্বাচনে বাহুবলী নেতাদের আনাগোনা লেগেই থাকে। নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের বাধ্য করার মতো ঘটনাও ঘটে। নির্বাচন কমিশনের তরফে এসব রুখতে নানা পদক্ষেপও করা হয়েছে। কিন্তু বিহারের ওই কেন্দ্রে তা কতটা কাজে আসে, সেটাই দেখার।