কেবল বারবার ধর্ষণ-ই নয়, মানুষের মাংস রান্না করতেও বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। বাধ্য হয়েছিলেন সেই মাংস খেতেও। হ্যাঁ, জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়ে এমনই বীভৎস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন এক তরুণী। যে অভিজ্ঞতার কথা শুনে স্তম্ভিত রাষ্ট্রসংঘের সদস্যরাও। শুনে নেওয়া যাক।
গৃহযুদ্ধের জেরে বিধ্বস্ত দেশ। দু’দশক ধরে সেখানে মোতায়েন রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষী বাহিনী। তবুও ভেতরে ভেতরে উগ্রবাদী সংগঠনগুলির কার্যকলাপ চলছেই। আর তার দরুন যে কীরকম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে, সম্প্রতি উঠে এল সেই ছবিই। রাষ্ট্রসংঘের এক বৈঠকে সে কথা জানালেন নারীর অধিকার রক্ষা সংগঠন ‘ফিমেল সলিডারিটি ফর ইন্টিগ্রেটেড পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রধান জুলিয়েন লুসেঞ্জ। আর সেখানেই জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হওয়া এক মহিলার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
আরও শুনুন: উদয়পুরের ঘটনা ‘ইসলামের পরিপন্থী’, নিন্দা-প্রতিবাদে সরব দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা
দেশটি কঙ্গো। আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত এই তৃতীয় বিশ্বের দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এমনিতেই বেশ টালমাটাল। খাতায় কলমে গণপ্রজাতন্ত্র জারি থাকলেও গৃহযুদ্ধের জেরে নাকাল দেশের আমজনতা। বিশেষ করে মে মাসের শেষদিকে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সরকারের সঙ্গে উগ্রবাদীদের লড়াই। তাই সম্প্রতি কঙ্গোর পরিস্থিতি নিয়েই বৈঠকে বসেছিল রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আর সেখানেই, ১৫ সদস্যের সামনে এক মহিলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন জুলিয়েন লুসেঞ্জ। একবার নয়, দু’দুবার উগ্রপন্থীদের হাতে ধরা পড়েন ওই মহিলা। তাঁর পরিবারের একজনকে অপহরণ করেছিল কোডেকো জঙ্গিরা। কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্ব অংশের দখল নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী। তাদের হাতে আটক পরিজনকে ছাড়িয়ে আনার জন্য মুক্তিপণ দিতে গিয়ে ওই মহিলা নিজেও অপহৃত হয়ে যান। আর তারপরই শুরু হয় চরম অত্যাচার। অকথ্য শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি একাধিকবার জঙ্গিরা তাঁকে ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা। কিন্তু সেখানেই বিভীষিকার শেষ নয়। এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। তারপর মৃতদেহ থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে আনে তারা। মহিলাকে নির্দেশ দেয় তা রান্না করার জন্য। এবং তারপর, সমস্ত বন্দিদেরই সেই রান্না করা মাংস খেতে বাধ্য করে ওই উগ্রপন্থীরা।
আরও শুনুন: ভগবানের নামে সাইবার জালিয়াতি! ভক্তদের থেকে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ পাঁচ পুরোহিতের
জুলিয়েন লুসেঞ্জ আরও জানিয়েছেন, কয়েকদিন বাদে ওই জঙ্গি দলের হাত থেকে ছাড়া পেলেও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেননি মহিলা। তিনি যখন ফেরার পথ খুঁজছিলেন, সেই সময়ে ফের আরেকটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠী তাঁকে অপহরণ করে। আবার সেই আগের অভিজ্ঞতারই পুনরাবৃত্তি চলে সেখানেও। অর্থাৎ ফের গণধর্ষণ। মানুষের মাংস রেঁধে খাওয়ার মতো ঘটনাও ফের ঘটে সেবারে। কোনোরকম ভাবে পালিয়ে এসে রাষ্ট্রসংঘের ওই নারী অধিকার সংগঠনের দ্বারস্থ হন মহিলা। আর সেখানেই এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। যে অভিজ্ঞতা স্তব্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের অভিজ্ঞ সদস্যদেরও।