পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আর স্যার ম্যাডাম সম্বোধন করতে হবে না। গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঔপনিবেশিক সম্বোধন জারি রাখার আর কোনও মানে হয় না। সর্বসম্মতিক্রমে এমনই সিদ্ধান্ত নিল কেরলের এক পঞ্চায়েত। যা প্রায় নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
হয় স্যার, নয় ম্যাডাম। এতকালের প্রচলিত সম্বোধন। এই-ই চালু ছিল পঞ্চায়েত অফিসে। তবে, এবার থেকে তা আর তা থাকবে না। ইতিহাস গড়ে কেরলের মাথুর পঞ্চায়েত অফিস ঠিক করল, আর সেখানে কেউ কাউকে স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করবে না। দল-মত নির্বিশেষে পঞ্চায়েতের সকল সদস্যই এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। সম্প্রতি সদস্যরা একটি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
আরও শুনুন: তালিবানদের জয়ে কেন উল্লাস! ভারতীয় মুসলিমদের কটাক্ষ করলেন Naseeruddin Shah
মূলত সাধারণ মানুষই নানা প্রয়োজনে পঞ্চায়েত অফিসে আসেন। সেখানে যাঁরা কাজ করেন এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। এতকাল ধরে এইসব ক্ষেত্রে স্যার, ম্যাডাম সম্বোধনই প্রচলিত ছিল। এখন তা মুছে দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, এই দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমানো। এমনটাই জানিয়েছেন মাথুর পঞ্চায়েতের যুগ্ম সভাপতি পি আর প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, দেশটা তো গণতন্ত্রে আস্থাশীল। সেখানে জনতাই সব। তাঁরাই জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। গণতন্ত্রে জনতাই প্রভু। সেখানে আলাদা করে কেউ আর উচ্চ আসনে বসে আছেন, এমনটা তো নয়। তাহলে ঔপনিবেশিক কায়দায় স্যার বা ম্যাডাম এই জাতীয় সম্বোধন বজায় রাখার কী মানে? এই বিবেচনা করেই তাঁরা এই সম্বোধন তুলে দিতে চেয়েছেন। এবং ইতিমধ্যে এই নতুন নিয়ম চালুও করেছেন। পঞ্চায়েতে ভিন্ন দলের প্রতিনিধি থাকলেও, এ বিষয়ে কোনও মতান্তর দেখা দেয়নি।
আরও শুনুন: মুছে গেল ইতিহাস, জালিয়ানওয়ালা বাগ-এর নয়া রূপ নিয়ে ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদরা
তবে, এখন কী বলে সম্বোধন করা হবে আধিকারিকদের? স্যার বা ম্যাডামের ভাষাগত বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়ে খোঁজ চলছে। ততক্ষণ পর্যন্ত বয়স অনুযায়ী দাদা বা দিদি বলে ডাকা যেতে পারে। এবং সেইমতো সম্বোধনেই প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দরবার করা যেতে পারে।
আর, যদি এরকম সম্বোধনে কাজ না হয়? সে ব্যবস্থাও করেছে এই পঞ্চায়েত। একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, স্যার বা ম্যাডাম বলে না-ডাকার জন্য যদি কাজ আটকে যায়, তবে সাধারোন মানুষ সরাসরি এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।
দূরত্ব সৃষ্টিকারী এই ডাক যে তাঁরা একেবারেই মুছে ফেলতে চাইছেন, তাঁদের এই পদক্ষেপেই তা স্পষ্ট।