সবার আগে ভোট। এমনকি ধর্মীয় নিয়ম পালনেরও নাগরিক কর্তব্য। সম্প্রতি কেরলের মসজিদ এমনই নিদান দিয়েছে। সবাই যেন ভোট দিতে পারে, তার জন্য নামাজের সময় পর্যন্ত কাটছাঁট করল মসজিদ কমিটি। ঠিক কী পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। কিন্তু সেই কাজে যদি ধর্মের নিয়ম বাধা হয়, তাহলে বেজায় সমস্যা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে এমনই সমস্যায় পড়েছিলেন মুসলিমরা। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার বিশেষ প্রার্থনার দিন। অথচ সেই দিনেই পড়েছে নির্বাচন। নমাজ পাঠ বাদ রেখে তো আর ভোট দিতে যাওইয়া সম্ভব নয়! কাজেই শুক্রবার অর্থাৎ জুম্মাবারে ভোট নিয়ে বেজায় আপত্তি তুলেছিলেন মুসলিম সমাজের অনেকেই। এই আবহে বিশেষ পদক্ষেপ করেছে কেরলের এক মসজিদ। কমিটির তরফে ভোটের সময় জুম্মাবারেও নমাজের সময় কাটছাঁট হয়েছে। যাতে ধর্ম পালনের জেরে কেউ নাগরিক কর্তব্য পালনে বঞ্চিত না হন।
আরও শুনুন: আইন-কানুন নিয়ে সন্তুষ্ট যোগীরাজ্যের মুসলিমরা, ‘বিজেপিকে ভোট দেবেন?’ উত্তরে বললেন…
ঘটনা নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এ দেশে ধর্ম মানেই স্পর্শকাতর বিষয়। এমনটা মনে করেন অনেকেই। বিভিন্ন অশান্তির মূলেও থাকে ধর্মীয় নিয়ম পালনের বাড়াবাড়ি। নিজের ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে অন্যের ধর্মকে অপমান করা নিয়ে কম বচসা হয় না। যা মাঝে মধ্যেই বড় আকার ধারণ করে। তাই বলে কি ব্যতিক্রম নেই! অবশ্যই রয়েছে। ভারতবর্ষ এমনও এক দেশ, যেখানে ইফতারের আয়োজন করে হিন্দু মন্দির কর্তৃপক্ষ। আবার নবরাত্রির উপোসীদের ফল উপহার দিতে হাজির হয় মুসলিম ভাইবোনেরা। এখনও এমন অনেকেই রয়েছেন যারা অন্যের ধর্মকে সম্মানের নজরেই দেখেন। আর সেই সম্মান কখনও যেন বাড়িয়ে দেয় বিশেষ কিছু পদক্ষেপ। ধর্ম পরিচয় যাই হোক, আসলে সবাই ভারতীয়, একথা মনে পড়লেই যেন সবটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। কেরলের এক মসজিদ কর্তৃপক্ষও সম্প্রতি ঠিক এই কাজ করেছে। একজন ভারতীয় হিসেবে ভোট দেওয়া যে আবশ্য কর্তব্য তাই মনে করিয়ে দিয়েছে ওই মসজিদ কমিটি।
আরও শুনুন: ‘আঙুল ঠিক জায়গায় দিন’, অভিনেত্রীর হস্তমৈথুনের দৃশ্য ঘুরিয়ে দিয়েছিল নির্বাচনী প্রচারও
আসলে মুসলিমদের কাছে শুক্রবার অত্যন্ত পবিত্র দিন। এই জুম্মাবারে স্রেফ নমাজ পাঠ নয়, সেই সঙ্গে বিশেষ প্রার্থনাতেও শামিল হন তাঁরা। প্রায় সব মসজিদেই এই ব্যবস্থা থাকে। প্রথমে আরবি ভাষায় ওই প্রার্থনা। যা অন্তত ৪৫ মিনিট ধরে চলে। তারপর নমাজ পাঠ। কেরলের বেশিরভাগ মসজিদেই জুম্মাবারের প্রার্থনা শুরু হয় বেলার দিকে। মোটামুটি ১২টা ৪৫ নাগাদ। তারপর প্রায় দেড়টা অবধি চলে প্রার্থণা। এরপর নমাজ পাঠ সবটা শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় কোথাও কোথাও। কিন্তু ভোটের দিন এমনটা হলে তো অনেকেরই ভোট দিতে যাওয়া হবে না। তাই দক্ষিণের কিছু মুসলিম সংগঠন ঠিক করে ভোটের সময় যে জুম্মাবার পড়েছে, সেদিন নমাজের সময় বদলানো হবে। সেখানকার অধিকাংশ মসজিদ কমিটিও সহমত হয়। ঘোষণা করে দেওয়া হয়, ভোটের জুম্মাবারে প্রার্থণা হবে ২৫ মিনিটের। আর নমাজ পাঠ হবে মাত্র ১৫ মিনিটের। শুধু তাই নয়, একই সময় সব মসজিদে প্রার্থণা হবে না। সময়ের কিছুটা বিরতি রেখেই পালন করা হবে ধর্মীয় নিয়ম। মসজিদ কমিটির কথায়, এই বিশেষ ব্যবস্থার একমাত্র কারণ নির্বাচন। কোনওভাবেই ভোট দেওয়ার মতো নাগরিক কর্তব্য অবহেলা করা উচিত হবে না। তাই ধর্মীয় নিয়ম পালন বজায় রেখেই সকলকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন তাঁরা।