স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ধর্মীয় সংগীত বাধ্যতামূলক হলে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগছে মুসলিম পড়ুয়াদের। তাই স্কুলের মধ্যে ভজন বা সূর্যপ্রণাম বন্ধ করার আর্জি জানাল কাশ্মীরের এক মুসলিম সংগঠন। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
স্কুলে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা উচিত কি না, সেই মর্মে মাঝে মাঝেই উসকে ওঠে বিতর্ক। এবার সেই বিষয়েই সরাসরি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠাল কাশ্মীরের এক মুসলিম সংগঠন। উপত্যকার সরকারি স্কুলগুলিতে ভজন গাওয়া কিংবা সূর্যপ্রণাম করার মতো আচরণগুলি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ওই সংগঠন। এহেন আচরণে স্কুলের মুসলিম পড়ুয়াদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগছে বলেই দাবি করেছে সংগঠনটি।
আরও শুনুন: যৌনতায় হরতাল! মাংস খায় এমন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম বন্ধ করুক নারীরা, ডাক দিল PETA
দুই দেশের টানাপোড়েনে অশান্তি লেগেই থাকে ভূস্বর্গে। আর সেই সূত্র ধরেই ধর্মীয় রেষারেষিও সেখানে কম নেই। এবার এই নয়া অভিযোগের সূত্র ধরে ফের ক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে উপত্যকায়। কাশ্মীরের প্রায় ৩০টি ইসলামিক ধর্মশিক্ষা ও পাঠদান কেন্দ্রের সম্মিলিত সংগঠন মুত্তাহিদা মজলিস-ই-উলেমা বা এমএমইউ দাবি করেছে, উপত্যকার সরকারি স্কুলগুলিতে ভজন গাওয়া কিংবা সূর্যপ্রণাম করা বাধ্যতামূলক। ছাড় নেই মুসলিম পড়ুয়াদেরও। কিন্তু এই জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে একান্তই নারাজ তারা। এই নির্দেশ আসলে তাদের মুসলিম পরিচয়কে মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্র, এমন অভিযোগেই এবার সরব হয়েছে ওই ইসলামিক সংগঠনটি। এই নিয়মের তীব্র সমালোচনা করে সরকারের কাছে তা বন্ধ করার জন্য আর্জি জানিয়েছে এমএমইউ।
আরও শুনুন: ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়াই ‘অপরাধ’, মুসলমান পরিবারকে একঘরে করল গুজরাটের গ্রাম
নিজেদের এই দাবি নিয়ে শ্রীনগরের জামা মসজিদে একটি সভারও আয়োজন করে ওই সংগঠনটি। তাদের মূল বক্তব্য, স্কুলগুলিতে হিন্দু ভজন গাওয়া কিংবা সূর্যনমস্কার পালনের মাধ্যমে কাশ্মীরের মুসলমান সম্প্রদায়ের অস্তিত্বকেই আসলে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে এদিন পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুব মুফতি একটি ভিডিও শেয়ার করেন। যেখানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, শ্রীনগরের একটি স্কুলে ভজন গাইছে পড়ুয়ারা। তাদের মধ্যে মুসলিম পড়ুয়ারাও রয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের নির্দেশেই যে ওই সমবেত সংগীতে তাদের অংশ নিতে হয়েছে, সেই বিষয়টিও দেখা গিয়েছে ভিডিওতে। এসব আসলে কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পেরই অংশ, এমন দাবি করে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুফতি। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, যদি কোনও স্কুলে জোর করে পড়ুয়াদের হিন্দু আচার পালন করতে বলা হয়, তাহলে সেই স্কুল ছাড়িয়ে সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভরতি করে দিন। তবে এই দাবির বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ফারুক আবদুল্লা। তাঁর মতে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। তাই সেখানে যে কোনও ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের নিয়ম পালন করতে পারেন। মুসলমান হয়েও যদি কেউ ভজন গায়, তাহলে কোনও দোষ নেই বলেই মনে করেন আবদুল্লা। তবে এই ইস্যুতে উপত্যকায় নতুন করে বিতর্ক ঘনিয়ে উঠল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।