হিজাব বয়কট থেকে মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহারের বিরোধিতা – সম্প্রতি একের পর এক ইস্যুতে শিরোনামে কর্ণাটক। প্রতি ক্ষেত্রেই আক্রমণের অভিমুখ ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দিকেই। বলা ভালো, ইসলামি সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়েই বিরোধিতা তুঙ্গে উঠেছে সে রাজ্যে। এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন, মুসলমান ফলবিক্রেতাদের বয়কট। কেন তাঁদের বয়কটের ডাক উঠল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গরম মানেই আমের মরশুম। আর আমাদের দেশে যে সব জায়গায় দারুণ আমের ফলন হয়, তার মধ্যে কর্ণাটক অন্যতম। সে রাজ্যের ১৬টি জেলা জুড়ে হয় আমের চাষ। সেই আম এই মরশুমে রাজ্যে তো বটেই, ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশেই। কর্ণাটকে আম ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিনই সে রাজ্যের মুসলমানরা যুক্ত। এতদিন তা নিয়ে তেমন কোনও মাথাব্যথার কারণ ছিল না। সম্প্রতি অবশ্য সময় বদলেছে। কেন মুসলমান ফলবিক্রেতারা চুটিয়ে ব্যবসা করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সমাজের একাংশ। শুধু তাই-ই নয়, মুসলমান ফল বিক্রেতাদের বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও শুনুন: আমিষ খাবার দেওয়া বন্ধ হোক বিমানে, নয়া দাবি ঘিরে বাড়ছে বিতর্ক
মূলত এই অভিযোগ এবং বয়কটের ডাক দেওয়ার নেপথ্যে আছে ‘হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি’ এবং ‘শ্রীরাম সেনা’। দুই সংগঠনের সদস্য-সমর্থকরা একযোগে এই দাবি তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের আমের বাজারে মুসলমান বিক্রেতারা আধিপত্য কায়েম করে করছেন। এবার বরং হিন্দু গরিব আম চাষী এবং ব্যবসায়ীরা এই বাজারের দখল নিক, সেই সময় এসে গিয়েছে। তাঁরা যে এমনি এমনি এ-কথা বলছেন না, সে যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, কর্ণাটকের আমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মুসলমান ব্যবসায়ীরাই। এদিকে আম ফলান যাঁরা, তাঁরা মূলত হিন্দু গরিব চাষি। মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীদের দৌলতে সেই চাষীরা নিদারুণ দুঃখে থাকেন। তাঁদের অনেক সময়ই ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া মূল্য মেনে নিতে হয়। এই ব্যবসায়ী শ্রেণি মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাই তাঁদের বক্তব্য, বাজারের দখল নিন হিন্দু ব্যবসায়ীরা। বা যাঁরা ফল ফলান তাঁরা। অর্থাৎ মোদ্দা কথা, কষ্ট করে আম ফলাবেন গরিব চাষি, আর লাভের গুড় কেন খাবেন মুসলমান ব্যবসায়ীরা- এইটাই তাঁদের বিরোধিতার মূল সুর।
আরও শুনুন: ‘যখন খুশি মাংস খাওয়ার অনুমোদন সংবিধানই দিয়েছে’, দিল্লির ফরমানকে বিঁধলেন মহুয়া
কিন্তু এহেন যুক্তি দুটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তবে কি এই সংগঠনের সদস্যরা মুসলমান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিতে চাইছেন না? তাঁরা বলছেন, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। তাঁরাও চাইছেন মুসলমান ব্যবসায়ীরা তাঁদের মতো ব্যবসা করুক। পাশাপাশি হিন্দু চাষি ও ব্যবসায়ীরাও বাজারের দখল নিক, যাতে মুসলমান ব্যবসায়ীরা তাঁদের একচেটিয়া কারবার না করতে পারেন। বা দাম বেঁধে দিতে না পারেন। নইলে কারোর ব্যবসা বন্ধের পক্ষপাতী নন তাঁরা। সেক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক হয় পরের প্রশ্নটি। যে মধ্যসত্ত্বভোগীদের জন্য গরিব চাষির আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, সে তো একেবারেই ব্যবসার পদ্ধতিগত সমস্যা। সেখানে হিন্দু-মুসলমানের বিষয়টি আসছে কোথা থেকে? প্রশ্ন অনেকেরই।
কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী বলছেন, এতদিন তো মুসলমান বিক্রেতারা ফল বিক্রি করছেন। তা নিয়ে তো কই কোনও সমস্যা হয়নি। তাহলে এখন হচ্ছে কেন? তাঁর দাবি, ভোটের কারণেই চলছে এই বিভাজনের হিসেব-নকেশ। অন্যান্য বিরোধী দলও এই ধরনের বয়কটের তীব্র বিরোধিতা করেছে। যদিও হিজাব থেকে মুসলমান ফলবিক্রেতাকে বয়কট- কর্ণাটক যে কোন রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে বা যেতে চাইছে তা স্পষ্ট বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।