এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন কবি। কারণ সেই মিলনের ধারাই বয়ে নিয়ে চলেছে এই দেশের ইতিহাস। সম্প্রতি সেই বার্তাই যেন আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল কর্ণাটকের একটি মন্দিরে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দক্ষিণপন্থীদের বিরোধিতার কমতি নেই। কিন্তু তার জেরে নিজেদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য বদলে ফেলতে নারাজ কর্ণাটকের ঐতিহাসিক চেন্নাকেশব মন্দির। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান পাঠ করে তবেই রথোৎসব শুরু করার নিয়ম এই হিন্দু মন্দিরে। এ নিয়ে বিভিন্ন শিবির থেকে যতই বিরোধিতা আসুক, সেসব অগ্রাহ্য করেই এখনও পুরনো রীতি জারি রেখেছে এই মন্দির। চলতি বছরেও একই পথে হাঁটবেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। বুধবার সে কথাই নিশ্চিত করল কর্ণাটক সরকার।
আরও শুনুন: মন্দির চত্বরেই আয়োজন ইফতারের, মুসলমান পড়শিদের আমন্ত্রণ স্বয়ং পুরোহিতের
সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে বারেবারেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কর্ণাটক। হিজাব বয়কট থেকে মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহারের বিরোধিতা– একের পর এক ইস্যু নিয়ে সেখানে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রতি ক্ষেত্রেই আক্রমণের অভিমুখ ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দিকেই। এমনকি কর্ণাটকে আম ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত মুসলমানদের বয়কটের ডাক দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী দুই সংগঠন। হিন্দু মন্দিরের সামনে ফল বিক্রি করার জন্য আক্রান্তও হন এক মুসলমান ফলবিক্রেতা। এই ঘটনার পরেও ফের তাঁর পোশাকের দিকে নিশানা করে আক্রমণ শানান এক বিজেপি বিধায়ক। সব মিলিয়ে, কর্ণাটকের অবস্থা এখন যথেষ্ট টালমাটাল। আর এমন বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতিতে এ বছরের উৎসব কোন পথে হাঁটবে, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে ছিলেন অনেকেই। তবে সব সংশয় উড়িয়ে শেষমেশ পুরনো নিয়ম অনুসরণ করাকেই মান্যতা দিল সে রাজ্যের সরকার।
এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মন্দিরের রীতি অনুযায়ী বরাবরই কোনও মৌলবি এসে কোরান পাঠ করেন। আর এই পাঠের মধ্যে দিয়েই রথোৎসবের সূচনা হয়। কিন্তু এবার সেই রীতি আদৌ পালন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন সকলে। কেননা কয়েকদিন আগেই মন্দির চত্বরে মুসলমান বিক্রেতারা দোকান দিতে পারবেন না এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। বস্তুত বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী দল থেকেই মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে এহেন আরজি জানানো হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে একাধিক পুরোহিতের ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন ঘোষণা করে, পুরনো রীতি অনুযায়ীই চলবে অনুষ্ঠান। উৎসবে মুসলমানদের যোগদান এবং ব্যবসায় অংশগ্রহণও বজায় থাকবে বরাবরের মতোই, নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
আরও শুনুন: ৫ বছরে দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা প্রায় ৩৪০০টি, জানাল কেন্দ্র
বুধবার থেকে রথোৎসব শুরু হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে। দুদিনের এই উৎসবে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য কড়া নজরদারি বহাল রেখেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। দেশজুড়ে ঘটে চলা একাধিক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছবির মাঝে জেগে থাকুক এহেন সম্প্রীতির ছবি, এমনটাই আশা করছেন কর্ণাটকের মানুষও।