ভোটের পর ভোট আসে। তবু তাঁদের অবস্থা আর বদলায় না। স্বাধীনতার এত বছর পরেও তাঁরা শুধু ভোটের দিকে তাকিয়ে থাকেন শৌচাগারের আশায়। তাঁদের পরিচয় তাঁরা দলিত। এমনকী ভোটবাক্সের খাতিরেও নেতারা যাঁদের নিয়ে তেমন চিন্তিত নন, আসুন শুনে নেওয়া যাক তাঁদের কথা।
বাবাসাহবে আম্বেদকর এখন থাকলে আশ্চর্যই হতেন। স্বাধীনতার এত বছর পরে, এত প্রয়াসের পরও যে দেশে অস্পৃশ্যতা এখনও মুছে যায়নি, এ কথা জেনে অবাক না হয়ে তাঁর উপায়ই বা কী! আক্ষেপ করে এ কথা যিনি বলছেন, তিনি দলিত সম্প্রদায়েরই এক মহিলা। অস্পৃশ্যতার ধারণা যে এখনও তাঁদের আলাদা করে রেখেছে, তা তিনি বিলকুল জানেন।
আরও শুনুন: প্রধানমন্ত্রী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, ভোটের ‘অস্বস্তি’ কাটাতে চান মোদি?
তাঁদের বাস কর্নাটকের রোট্টিগাওয়াড় গ্রামে। তবে গ্রামে বলা ভুল। গ্রামের সীমান্তে তাঁদের আবার আলাদা আবাস, যার নাম আম্বেদকর কলোনি। মূলত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরাই থাকেন সেখানে। যথারীতি গ্রাম থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন। এই কদিন আগে পর্যন্ত গ্রামের সেলুনেও যেতে পারতেন না দলিতরা। তাই নিয়ে অনেক বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে শেষমেশ হস্তক্ষেপ করতেও হয়। উঁচু জাতের মানুষরা যেখানে প্রার্থনা করেন সেই মন্দিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই বিষয়গুলির কোনও সমাধান নেই। অথচ প্রতিবার ভোট আসে। নানা ইস্যু নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনীতি। তবু অস্পৃশ্যতার এই কারাগার থেকে মুক্তি নেই দলিতদের।
আরও শুনুন: ২৭২-এর আগে যদি থামে গেরুয়া-রথ, প্ল্যান-বি কী? শাহ বললেন…
একেবারে মৌলিক যে সব পরিষেবা তা থেকেও অনেকাংশে বঞ্চিত তাঁরা। শুধু শৌচাগারের কথা ধরলেই দেখা যায় দলিতরা আজও যে তিমিরে সে তিমিরেই। কলোনি গড়ে যেটুকু অংশে তাঁরা থাকেন সেখানে শৌচাগার বলে আদৌ কিছু নেই। কেউ কেউ বাড়ির লাগোয়া অংশে একটা কিছু ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। যাঁদের সে সামর্থ নেই তাঁদের মাঠই ভরসা। এদিকে দেশ নাকি প্রকাশ্য শৌচমুক্ত বলে অনেকেই দাবি করে থাকেন। অথচ দলিতরা বলছেন, শৌচাগার জিনিসটাই তাঁদের চিন্তার বাইরে। নিজস্ব জমি বলতেও তাঁদের কিছু নেই। ফলে শৌচাগার নির্মাণও সম্ভব নয়। এর দরুন মহিলাদেরই সবথেকে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। খুব সকাল কিংবা রাতের অন্ধকারকেই শৌচের সময় হিসাবে বেছে নিতে হয় তাঁদের। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে। তবে, স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার কি পরিসর আছে? যেখানে জলের সরবরাহই নেই। অবস্থাটা বেশ অদ্ভুত। কল আছে, জল নেই। সরকারি তরফে কল বসিয়ে দেওয়া আছে, কিন্তু সেখানে জল আসে না। ওদিকে গ্রামের অন্য অংশে, যেখানে উঁচু জাতের মানুষের বাস, সেখানে জলের সরবরাহ আছে। তবে, সেখানে সব কল-ই ঘরে ভিতরে। উঁচু জাতের মানুষরা সেরকম ব্যবস্থাই করে নিয়েছেন। ফলে সেখান থেকে জল পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই দলিতদের নেই। ওই কলোনির বাইরে তাঁদের যাওয়ার অনুমতিই নেই। ফলত মৃত্যুর পরেও একই রকম হেনস্তা পোহাতে হয় দলিতদের।
এই যে ছবিটি, তা নিখাদ বাস্তব। এবং তার কোনও বদল নেই। কর্নাটকের রাজনীতি, এমনকী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলও নিয়ন্ত্রণ করে লিঙ্গায়ত ও ভোকালিগা সম্প্রদায়ের মানুষ। ভোটের দ্বন্দ্বও তাঁদের ঘিরেই আবর্তিত হয়। এর মাঝে প্রায় একই রকম হয়ে থেকে যায় দলিতদের জীবন। তাঁদের আক্ষেপ, ভোটের খাতিরেও নেতারা কেউ তাঁদের কাছে আসে না। অস্পৃশ্যতার ধারণা এখনও এমনই জোরাল, আম্বেদকর দেখলে হয়তো সত্যি অবাকই হতেন।