হিজাব নিষিদ্ধ থেকে শুরু করে মুসলমান ফল বিক্রেতাদের বয়কট এবং আক্রমণ – একের পর এক বিদ্বেষের ঘটনা ঘটে চলেছে কর্ণাটকে। সম্প্রতি হিন্দু মন্দিরের সামনে ফল বিক্রি করার জন্য আক্রান্ত হয়েছেন এক মুসলমান ফল বিক্রেতা। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই ঝড় উঠেছে বিতর্কের। এবার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন এক বিজেপি বিধায়ক। তাঁর নিশানায় ফল বিক্রেতাদের পোশাক। ঠিক কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
কর্ণাটকের ফল বাজারের দখল মুসলমান ব্যবসায়ীদের হাতে। তাতে মার খাচ্ছেন হিন্দু চাষিরা। এই অভিযোগ তুলেছিল কয়েকটি হিন্দু সংগঠন। ডাক ওঠে মুসলমান ফল বিক্রেতাদের বয়কটেরও। ঠিক তার পরেই মন্দিরের সামনে আক্রান্ত হন এক মুসলমান ফল বিক্রেতা। সম্প্রতি এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। যেখানে দেখা যায়, বিক্রেতার উপর চড়াও হয়ে যাবতীয় ফল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও অভিযোগের তির হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যের দিকেই। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতরা ‘শ্রীরাম সেনা’ সংগঠনের সদস্য বলেই প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলেও জানা যাচ্ছে।
আরও শুনুন: মন্দির চত্বরেই আয়োজন ইফতারের, মুসলমান পড়শিদের আমন্ত্রণ স্বয়ং পুরোহিতের
এবার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ খুললেন কর্ণাটকের বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ বেল্লাড। তাঁর নিশানায় মুসলমান ফল বিক্রেতাদের পোশাক। যে ধরনের পোশাক পরে মুসলমান ফল বিক্রেতারা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েন হিন্দু ভক্তরা- এমনটাই দাবি ওই বিধায়কের। ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা হিন্দু মন্দির। তার সামনে যদি কোনও মুসলমান ফল বিক্রেতা দাঁড়িয়েও থাকেন, তাঁর তো পোশাক বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।” তাঁর ইঙ্গিত, যদি কেউ মাথায় ফেজ, লম্বা পাজামা পরে হিন্দু মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে ভক্তদের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। সামগ্রিক ভাবে মুসলমানদের পোশাক যে হিন্দুদের কাছে অস্বস্তির, বিশেষত মন্দিরের সামনে এই পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা যে একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়, এ-কথাই স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন তিনি। প্রায় একইরকম যুক্তি শোনা গিয়েছিল দিল্লিতেও। রামনবমীর সময় মাংস দোকান বন্ধের নির্দেশিকায় অন্যান্য নানা কারণের সঙ্গে জানানো হয়েছিল যে, এই সময় মাংসের গন্ধ নিরামিষাশী ভক্তদের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আরও শুনুন: দেশরক্ষাই ধর্ম, রমজান পালনের মধ্যেও কর্তব্যে অবিচল ইউক্রেনের মুসলমান সৈনিকরা
এদিকে কর্ণাটকে ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ঘটনা মাথাচাড়া দেওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সে রাজ্যের প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোমানি জানিয়েছেন, “সরকার এই ধরনের হিংসার ঘটনাকে প্রশ্রয় দেবে না। আইন যারা নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তাদের রেয়াত করা হবে না।” মুসলমান ফল বিক্রেতাদের বয়কটের ডাক যখন উঠেছিল, তখনই সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। তিন জানিয়েছিলেন, এতদিন এ রাজ্যে এ ধরনের সমস্যা ছিল। ভোটের কারণেই এই বিভাজনের রাজনীতির আমদানি বলে মন্তব্য করেন তিনি। মুসলমান ফল বিক্রেতা আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। জানান, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত। কেন মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে কংগ্রেসের তরফেও। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্রেফ মুখের কথা নয়, তাঁর সরকারের কাজই এ-বিষয়ে যা বলার বলে দেবে।