নেতার মত দলের নয়। বিতর্ক এড়াতেই সাফ বলে দল। কিন্তু যে দল নেতার হাত শক্ত করেছে, সেই দল তাঁর মন্তব্যের দায় চাইলেই এড়াতে পারে কি? কঙ্গনার সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন করে উসকে উঠল সে প্রশ্ন।
ভোট বড় বালাই। ভোটপ্রচারে প্রার্থীদের বেলাগাম মন্তব্যে অনেকসময়ই রাশ টানে না দল। আবার পরবর্তী সময়ে যদি দেখা যায়, সেই প্রার্থীর কোনও মন্তব্য ভোট পাওয়ার পক্ষেই বাধা হতে পারে, তাহলে সেই মন্তব্য থেকে পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়েও ফেলতে পারে ওই দলই। অর্থাৎ যোগ বিয়োগের হিসেব চলে ভোটের হিসেব মাথায় রেখেই। কিন্তু যে দল নেতা বা নেত্রীর হাত আগে শক্ত করেছে, সেই দল তাঁর মন্তব্যের দায় চাইলেই এড়াতে পারে কি? সম্প্রতি কঙ্গনা রানাউতের কথায় সেই প্রশ্নই নতুন করে উসকে উঠল।
আরও শুনুন:
‘বিজেপিই আমার রাজনৈতিক গুরু’, কেন মানলেন রাহুল গান্ধী?
সোশাল মিডিয়ার একটি পোস্টে কঙ্গনা লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে কৃষক আন্দোলন বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের জন্যই তা হতে পারেনি।’’ ওই পোস্টে কঙ্গনা এ-ও লিখেছিলেন যে, ‘‘কৃষক আন্দোলন চলাকালীন ঝুলন্ত অবস্থায় বহু দেহ পাওয়া গিয়েছে। সেই সময় প্রচুর ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।’’ এই মন্তব্যের জেরে নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে এমনিতেও মোদি সরকার খানিক ব্যাকফুটেই। ২০২০ সালে তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে চাপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়েই সেই আইন প্রত্যাহার করে সরকার। তারপরেও অবশ্য কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। সেখানে কঙ্গনার এহেন মন্তব্যে যে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে না বিজেপি, তা তাদের অবস্থানেই স্পষ্ট। বিশেষ করে হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে আপাতত পাখির চোখ বিজেপির। তার আগে সে রাজ্যের ভোটারদের চটাতে চাইবেন না কোনও রাজনৈতিক নেতাই। অতএব তড়িঘড়ি কঙ্গনার মন্তব্যের থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে পদ্মশিবির। সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ মত কঙ্গনারই একান্ত ব্যক্তিগত। না সেই মতে বিজেপির কোনও ভূমিকা আছে, না বিজেপির তরফে কঙ্গনাকে মতপ্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজেপি যে কোনোভাবেই সাংসদ অভিনেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের পাশে নেই, তা স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছে পদ্মশিবির।
আরও শুনুন:
‘বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে?’ প্রশ্ন রাহুলের, ‘আপনার বিয়ে কবে?’ পালটা দিলেন ছাত্রীরাও
বিজেপির গুণগান করতে গিয়ে অনেকসময়ই বিরোধীদের প্রতি অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন কঙ্গনা রানাউত। তাতে বিজেপির খাতায় তাঁর নম্বর বেড়েছে বই কমেনি। এমনকি লোকসভা নির্বাচনে সহজ টিকিট আর সাংসদ হওয়ার পথও মিলেছে অনায়াসে। ফলে যতই প্রতিবাদ আর সমালোচনা হোক না কেন, কঙ্গনাও তাঁর স্বভাবটি বজায় রেখেই চলেছেন। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম। কৃষক আন্দোলন ইস্যুতে মোদির প্রশংসা করেও এমনই মন্তব্য করে বসেছেন কঙ্গনা, যে, বিজেপি সরকারের কাছেই তা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই এই দূরত্ব রচনা। কিন্তু শুধু বিজেপি কেন, কমবেশি সব দলের নেতানেত্রীরাই রাজনৈতিক পরিসরে যখনতখন বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন। তা নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়, তবুও অবস্থা পালটায় না। দলও অনেকসময়েই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায় না। কঙ্গনার ঘটনা বুঝিয়ে দিল, সেই মাথা না ঘামানো পরবর্তী কালে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তখন সেই অস্বস্তিকে নেত্রীর ব্যক্তিগত মত বললেও এককথায় হাত ঝেড়ে ফেলা যায় না। কারণ সেই নেত্রী বাইরের কেউ নন, তিনিও দলেরই শরিক। যে নেত্রীকে দল এতদিন পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছে, তাঁর সাফল্যের ফল কুড়িয়ে নিয়েছে ভোটের বাজারে, তাঁর রাজনৈতিক ত্রুটির দায়ও দলের উপরে বর্তায় বইকি। আর সেই দায়কে চাইলেই যে এড়ানো যায় না, সেকথা সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই মনে রাখা ভালো।