ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের ছবি প্রকাশ্যে না আনাই উচিত বিচারপতিদের। গণেশ পুজোয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দেখে যখন বিতর্ক উসকে উঠেছে, সেই আবহেই এই মন্তব্য প্রাক্তন সুপ্রিম বিচারপতির। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিচারপতিদের ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের ছবি জনসমক্ষে না আনাই উচিত। জনতার কাছে তাঁদের ধর্ম একটাই। সে ধর্ম সংবিধান এবং সাংবিধানিক নীতি। আর প্রকাশ্যে একমাত্র সেই ধর্ম পালনের দিকেই জোর দিতে পারেন বিচারপতিরা, সাফ মত সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি হিমা কোহলির। দিনকয়েক আগেই গণপতি পূজায় দেখা গিয়েছে, খোদ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের প্রধানের সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধর্মীয় সূত্রে এহেন ব্যক্তিগত যোগাযোগ নিয়ে অনেক প্রশ্নই উসকে উঠেছে। সেই আবহেই এই মন্তব্য করলেন বিচারপতি কোহলি, সম্প্রতিই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের পদ থেকে যিনি অবসর নিয়েছেন।
আরও শুনুন:
‘প্রধান বিচারপতির বাড়িতে কেন মোদি?’ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ডাক্তারদের হয়ে লড়বেন সেই আইনজীবীই
প্রকাশ্য কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কি বিচারপতিদের অংশগ্রহণ করা সাজে? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন জাস্টিস কোহলি। আর তার উত্তরেই তাঁর মন্তব্য, যেহেতু প্রশ্নটি তাঁকেই করা হয়েছে, অতএব তিনি কেবল নিজের কথাই বলতে পারেন। আর তাঁর ব্যক্তিগত মত, ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচরণ সবকিছুই অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তা চার দেওয়ালের মধ্যেই থাকা উচিত। প্রকাশ্য জগতে তা বয়ে নিয়ে না যাওয়াই ভালো। বিচারপতিদের ক্ষেত্রে কোনও ধর্মীয় আচার-আচরণের চিহ্ন সবার সামনে তুলে ধরা উচিত নয় বলেই মত জাস্টিস কোহলির।
আসলে, পুলিশ-প্রশাসনের পরিসরে রাজনীতির নানারকম টানাপোড়েন থাকে। কিন্তু আইনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকারই কথা। ন্যায়বিচারের আশাতেই আদালতের দ্বারস্থ হয় মানুষ। বিচারপতি নিরপেক্ষভাবে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের কথাই খতিয়ে দেখবেন, এমনটাই তাদের আশা। সেখানে কোনও বিচারপতি যদি তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে জাহির করেন, তবে মানুষের আশঙ্কা হওয়াও স্বাভাবিক যে সেই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রভাব বিচারে এসে পড়বে। বিচারপতির ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পক্ষপাত বিচারকে প্রভাবিত করবে, মানুষ এমনটা ধরে নিলে আইন এবং সংবিধানের পক্ষে তা আশার কথা নয়। আর সেই বিষয়টি নিয়েই একরকম সতর্ক করলেন বিচারপতি হিমা কোহলি।