তাড়া করে আসছে যুদ্ধ। প্রাণ বাঁচাতে গেলে পালাতে হবে। তাই পায়ে হেঁটেই কুড়ি ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেন এক সাংবাদিক। আমজনতার জীবন কীভাবে তছনছ হয়ে গিয়েছে এই যুদ্ধের দরুন, চলার পথে দেখলেন সেইসব ছবিও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মাথার উপর ছাদ। দিন চলার মতো কাজ। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এইটুকুই তো লাগে পাঁচটা সাধারণ মানুষের। সে মানুষ যে দেশেই থাকুক। কিন্তু সেই নিরীহ দিনযাপনকেই ইচ্ছেমতো লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় হঠাৎ করে এসে পড়া যুদ্ধ। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, কিন্তু প্রাণ যায় উলুখাগড়ার, থুড়ি, আমজনতার। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে কীভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন, যাপন, এবার নতুন করে ধরা পড়ল সেই ছবি। সৌজন্যে এক সাংবাদিক। আসলে যিনি নিজেও ছিলেন এই পালাতে থাকা মানুষদের দলে। পালানোর পথটাও সহজ ছিল না একেবারেই। ২০ ঘণ্টা হেঁটে অবশেষে ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়েছেন ম্যানি মারোট্টা। পৌঁছেছেন ভিনদেশ পোল্যান্ডে। আর তারপর সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় তুলে ধরেছেন পথে দেখা টুকরো টুকরো ঘটনার ছবি। যা আসলে তুলে ধরেছে এই পালটে যাওয়া সময়টাকেই।
আরও শুনুন: ‘ভয় করছে’, মাকে শেষ মেসেজে জানিয়েছিলেন নিহত রুশ সেনা
২৫ বছরের ম্যানি মারোট্টা পেশায় একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট। বাড়ি রাশিয়ার পিটসবার্গে। সাংবাদিকতার সূত্রে ইউক্রেনেই থাকছিলেন তিনি। কিন্তু রাশিয়ার আকস্মিক হামলা, ফলে ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, সব মিলিয়ে বাধ্যত বদলে গিয়েছে সেই জীবন। প্রাণ বাঁচাতে ইউক্রেন ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন ম্যানি। কিন্তু দেশের মোট চার দিক থেকে আক্রমণ শানিয়েছে রাশিয়া। বন্ধ আকাশসীমাও। আরও অনেক মানুষের মতোই হাঁটতে শুরু করেছিলেন ম্যানি। পথে তাঁর চোখে পড়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা গাড়ির মিছিল। জ্বালানি ফুরোনোর পর গাড়ি ফেলে রেখে পায়ে হাঁটতে শুরু করেছেন গাড়ির মালিকেরাও। যেন তেন প্রকারেণ পালিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোটাই এখন লক্ষ্য ইউক্রেনের মানুষের। কারণ একদিকে রুশ হামলা, আরেকদিকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। ইউক্রেনে আপাতত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দেশ ছাড়ার অনুমতি নেই। দেশকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে তাঁদের। বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য জোর করেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তেমনই একটি ২৪ বছরের ছেলের সঙ্গে ফোন নম্বর আদানপ্রদান হয়েছিল ম্যানির। আবার এক মহিলাকে দেখেছিলেন তিনি, স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সেনার কাছে কাকুতিমিনতি করে যাঁকে চড় খেতে হয়েছিল। এই পালাতে থাকা মানুষদের মধ্যে এক বৃদ্ধাকেও দেখেছেন ম্যানি, পালানোর কোনও উপায় না পেয়ে যিনি ৮০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পোল্যান্ডে পৌঁছতে চাইছিলেন।
আরও শুনুন: রাশিয়ার নীতির ফলে দুর্ভিক্ষ তৈরি হয় ইউক্রেনে, মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১ কোটি মানুষের
কতটা পথ পেরলে আবার মিলবে ঘর? মিলবে শান্তির আশ্রয়? জানেন না এই মানুষেরা। পিছনে তাড়া করে আসছে যুদ্ধ। তাই অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে চলাই আপাতত তাঁদের নিয়তি।