ধর্মের ভিত্তিতে শিল্পীদের মধ্যে ভেদাভেদের বেড়া টানেনি ভারত। মেহেদি হাসান কিংবা নুসরত ফতে আলি খানের মতো পাকিস্তানি শিল্পীদের প্রাপ্য সমাদর দিতে কার্পণ্য করেনি দেশ। কিন্তু পাকিস্তান কখনও লতা মঙ্গেশকরকেও সে দেশে ডাকেনি। লাহোরে দাঁড়িয়ে এভাবেই ক্ষোভ উগরে দিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী জাভেদ আখতার। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নুসরত ফতে আলি খান, মেহেদি হাসান কি ফৈজ আহমেদ ফৈজ। নাগরিকতার সূত্রে তাঁরা পাকিস্তানের মানুষ। কিন্তু শিল্পের দুনিয়াকে কোনও দেশ দিয়ে ভাগ করা চলে না। সেই কথা মনে রেখেই এই শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান দিতে কখনও কুণ্ঠিত হয়নি ভারত। সে দেশে পাকিস্তানের একাধিক শিল্পীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, সগর্বে জানিয়েছেন জাভেদ আখতার। আর এই প্রেক্ষিতেই তাঁর কটাক্ষ, পাকিস্তান শিল্পীদের ক্ষেত্রেও ভারতের সঙ্গে বিবাদ জিইয়েই রেখেছে। তাই ভারতের কোনও শিল্পী ডাক পান না সেখানে। এমনকি লতা মঙ্গেশকরের মতো সুরসম্রাজ্ঞীর কোনও অনুষ্ঠানও সে দেশে আয়োজন করা যায়নি। সম্প্রতি ফৈজ ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে পাকিস্তানে গিয়ে এই প্রসঙ্গেই ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি বর্ষীয়ান গীতিকার।
আরও শুনুন: টাকা নেই তবু আই ফোন অর্ডার, পরিকল্পনা করে ডেলিভারি বয়কে খুন তরুণের
প্রখ্যাত উর্দু কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজ-এর স্মৃতিতে এবার সপ্তম ফৈজ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে পাকিস্তান। আর সেখানে যোগ দিতেই সম্প্রতি লাহোরে গিয়েছেন জাভেদ আখতার সহ ভারতীয় সংস্কৃতি জগতের কেউ কেউ। জানা গিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে দর্শকদের পক্ষ থেকে গীতিকারের কাছে একটি অনুরোধ এসেছিল। পাকিস্তানে কেবল সন্ত্রাসবাদই চলে না, ভারতীয়দের দিকে কেবল বোমা বর্ষণ করাই হয় না, বরং ফুলের মালাও এগিয়ে দেওয়া হয়, এই বার্তাটিই এ দেশে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তাঁরা। আর তার প্রেক্ষিতেই জাভেদ আখতার বলেন, কেউ কাউকে দোষারোপ করলে সমস্যার সমাধান হবে না। ২৬/১১ ইস্যু টেনে বর্ষীয়ান গীতিকার বলেন, মুম্বইয়ের একজন বাসিন্দা হিসেবে তিনিও সেই হামলার সাক্ষী। সেই হামলা কারা ঘটিয়েছিল, সে কথাও সকলেই জানে। সেই লোকেরাই পাকিস্তানে এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেই ভারতের ক্ষোভ, আর পাকিস্তানের পক্ষে সেই ক্ষোভ মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে দু-দেশের বিভাজনের অন্তরালে যে সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে, তা নিয়ে দুই দেশের নাগরিকদেরই সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাভেদ আখতার। আর সেই যোগসূত্র ধরেই এই বিভেদকে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আরও শুনুন: মুসলিম তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেললেই মিলবে চাকরি, হিন্দুত্ববাদী নেতার নিদানে তুঙ্গে বিতর্ক
দেশভাগের ফলে একটা গোটা দেশের মাঝখানে যে কাঁটাতার বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই কাঁটার আঘাত তারপর আর কখনোই মিলিয়ে যায়নি। সেই বিভেদের চিহ্ন মুছে ভারত আর পাকিস্তান, এই দুই দেশের সম্পর্ক সহজ হয়নি এখনও। আর এই বিভেদের জেরে সবচেয়ে বেশি আঘাত বোধহয় লাগে দুই দেশের শিল্পীদের গায়েই। কারণ শিল্প বিশ্বাস করে, সুরের ভাষা, ছন্দের ভাষায় সকলের অধিকার। সে ভাষার কোনও ধর্ম হয় না। কোনও বিভাজন হয় না। কিন্তু রাষ্ট্র যে সে কথাকে মান্যতা দেয় না সবসময়। তাই কোনও কোনও দেশে কোনও কোনও শিল্পী প্রবেশের অধিকারটুকুই পান না সারাজীবন ধরে। হ্যাঁ, তাঁর সৃষ্টিকে তো আর কাঁটাতার দিয়ে আটকে রাখা যায় না। সে ঠিকই ঢুকে পড়ে ফাঁকফোকর দিয়ে। আর তার জাদুতে মুগ্ধ করে দেয় শ্রোতা দর্শকদের। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে শিল্পীর মুখোমুখি সংযোগ ঘটে না বলে অপ্রাপ্তি জমে ওঠে দু-তরফেই। আর সেই অপ্রাপ্তির সুরই এবার পাওয়া গেল জাভেদ আখতারের গলায়।