বকরিদে কোরবানি দেওয়া নিয়ম। তার জন্য চাঁদা তুলেও কোরবানির পশু কিনে থাকেন অনেকে। এই ব্যক্তিই ইদের আগে চাঁদা তুলে ১২৪টি ছাগল কিনেছেন। তবে কোরবানির জন্য নয়। অবোলা পশুগুলিকে নতুন জীবন উপহার দিতেই এমনটা করেছেন তিনি। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মের নামে পশুহত্যা নতুন ব্যাপার নয়। এই নিয়ে হামেশাই তর্ক চলে। বিশেষ করে কালীপূজো কিংবা বকরিদের সময় নতুন করে মাথা চাড়া দেয় বিতর্ক। ধর্মের দোহাই দিয়ে একদল যেমন পশুবলির সমর্থনে সুর চড়ান, অন্যদিকে তেমনই অবোলা প্রাণী হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান অনেকে। তবে এই তর্ক বিতর্কই সার, বাস্তবে তেমন বদল হয় না কিছুই। তাই পশুহত্যা নিয়ে কারও সঙ্গে তর্কে জড়াননি দিল্লির চিরাগ জৈন। বুদ্ধি করে এমন কাজ করেছেন, যা একসঙ্গে ১২৪টি অবোলা প্রাণীকে কোরবানির হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
আরও শুনুন: ইদের স্বাদ বাড়ায় বাকরখানি, যে খাবারে মিশেছে প্রেমের করুণ কাহিনিও
ঘটনাটি সদ্য শেষ হওয়া বকরিদকে কেন্দ্র করে। এই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ কোরবানি। সেই উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বকরিদের আগে পশুদের বাজার বসে। সেখানে শয়ে শয়ে অবোলা পশু রাখা হয় বিক্রির জন্য। নিজেদের প্রয়োজন মতো সেখান থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যান মুসলিমরা। যেহেতু মুসলিম পরব, তাই অমুসলিম কাউকে এইসব বাজারে ঢুকতেই দেওয়া হয় না অনেকসময়। তাই বাজার থেকে অবোলা পশু কিনে কোরবানি আটকানো বেশ কঠিন। কিন্তু বুদ্ধি থাকলে কী না হয়! ইদের আগে এই ধরনের বেশ কিছু বাজার ঘুরেই ১২৪টি ছাগল কেনেন চিরাগ। তারপর সবকটি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। স্রেফ কোরবানির হাত থেকে পশুগুলিকে বাচানোই নয়, তাদের নতুন একটা জীবন দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল চিরাগের।
আরও শুনুন: পাঠ্য বইয়ে হাজির অযোধ্যা, বাদ বাবরি… ক্ষুব্ধ রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিতই
কিন্তু এমনটা কীভাবে সম্ভব করলেন তিনি?
দিল্লিতে মসজিদের সংখ্যা কম নয়। তাই বকরিদে সেখানকার মুসলিমদের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা থাকবে তা বলাই বাহুল্য। প্রতি বছর ইদের আগে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পশু বিক্রির বাজার বসে। সেখানে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় অবোলা পশু। অমুসলিম কেউ সেখানে চট করে ঢুকতেই পারবেন না। পশু কেনা তো দূরের কথা। কোনওভাবে সেটা করলেও, ইচ্ছা করে পশুর দাম এতটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয় যে অনেকেরই কেনার সামর্থ থাকে না। তাই চিরাগ প্রথমেই ঠিক করে নেন, নিজের ধর্মপরিচয়ে এই কাজ তিনি করতে পারবেন না। একইসঙ্গে তাঁর একার পক্ষেও সবটা সামলানো সম্ভব নয়। আর সবথেকে বড় কথা টাকা! বিনে পয়সায় কেউ পশু বিক্রি করবে না। তাই সবার আগে চাঁদা তোলা শুরু করেন চিরাগ। মূলত জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যদের কাছেই সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন বছর ত্রিশের যুবক। সকলেই এই মহৎ কাজে দুহাত উজাড় করে দান করেন। মাত্র একদিনে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়। এই টাকায় কতগুলি পশু কেনা সম্ভব সেই ধারণা ছিল না চিরাগের। তাই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে তিনি বেশ কয়েকটি দল ভাগ করেন। প্রায় ২৫ জন একাধিক দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন পশু বাজারে হাজির হন। কেউ যেন সন্দহ না করে, তাই মুসলিম সেজেই বাজারে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে গিয়ে রীতিমতো দরদাম করেই ছাগল কিনতে শুরু করেন প্রত্যেকে। দিনের শেষে দেখা যায়, ওই টাকায় মোট ১২৪টি ছাগল কেনা সম্ভব হয়ছে। সেগুলিকে নিয়ে একটি ধর্মশালায় হাজির হন চিরাগ। মুখে প্রশান্তির হাসি। অন্তত এই কটা পশু তো প্রাণে বাঁচবে!
যদিও জৈনদের এই উদ্যোগ প্রথম নয়। এর আগেও কোরবানি থেকে বাঁচাতে শয়ে শয়ে পশু কিনে নিয়ে গেছেন জৈন সম্প্রদায়ের মানুষজন। এমনকি উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তি প্রতি বছর এইভাবে কোরবানি আটকাতে পশুদের উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদিনে প্রায় ৬১৫ টি ছাগল উদ্ধার করেছেন তিনি। আসলে ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতেই এই কাজ করে চলেছেন জৈনরা। প্রত্যেকেই শুদ্ধ শাকাহারি। এবং কোনওভাবেই হিংসা সমর্থন করেন না। আগামীদিনেও একইভাবে কোরবানির হাত থেকে পশুদের রক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন জৈন সম্প্রদায়ের অনেকেই।