মসজিদের ভিতর ‘জয় শ্রী রাম’ বলা অপরাধ? সম্প্রতি এক মামলায় এমনই প্রশ্ন করতে শোনা গেল সুপ্রিম বিচারপতিকে। ঠিক কোন প্রসঙ্গে এমনটা বললেন তিনি? ঘটনাটাই বা কী ছিল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দির নয়, রামের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া হয়েছে মসজিদে। এমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্নাটকের এক গ্রামে। অভিযোগ, দুই হিন্দু যুবক মসজিদে ঢুকে রামের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা মসজিদে থাকা মুসলিমদের হুমকিও দিয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশ, গ্রেফতার করা হয় দুই যুবককে। কিন্তু ওই দুজন আদৌ অপরাধী কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বছর ঘুরল।
আসলে, এই ঘটনা ২০২৩-র। সেই সময় বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে চর্চা হয়েছিল। কেন মসজিদে ঢুকে রামের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া হবে, এই প্রশ্নই তোলেন সকলে। যদিও দুই যুবককে গ্রেফতার করায় বিষয়টা আড়ালে চলে যায়। পরে দুই যুবক জামিনও পান। কিন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে চলা মামলার মীমাংসা হয়নি। দুজনকে পেশ করা হয় কর্নাটক হাই কোর্টে। সেখানেও মামলায় স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তবে মামলা হাই কোর্টেই থেমে থাকেনি। জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। আর এখানেই আসল বিষয়টা সামনে আসে। সুপ্রিম বিচারপতিরা বিষয়টা শুনেই একাধিক প্রশ্ন তোলেন। জানতে চান, ‘কিভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় স্লোগান বা নাম অপরাধ হতে পারে?’ শুধু তাই নয়, মসজিদে ওই দুই যুবককে কীভাবে শনাক্ত করা হল, সে বিষয়েও জানতে চান বিচারপতির বেঞ্চ। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের কী পর্যবেক্ষণ তা শীর্ষ আদালতে জানান আবেদনকারীর আইনজীবী। সামনে আসে অসম্পূর্ণ তদন্তের তত্ত্ব।
এরপরই, সুপ্রিম বিচারপতিরা সাফ জানিয়ে দেন, দুই যুবকের বিরুদ্ধে যে ৫০৩ ও ৪৭৭ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তা কার্যকর নয়। এই দুই ধারায় অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং অনুপ্রবেশকে বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে কোনওটাই হয়নি বলে মনে করেছেন বিচারপতিরা। দুই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগও আনা হয়েছিল। সেটিও নাকচ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আর এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বারবার একই প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম বিচারপতিরা। প্রথমত, রামের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া কেন অপরাধ সেটা জানতে চেয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, কীভাবে এই স্লোগান অন্য কোনও সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে! কেন ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয় সেই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে সুপ্রিম কোর্টও কার্যত জানিয়ে দিল, এই বিষয়ে নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষনই সঠিক। পর্যাপ্ত তদন্ত না করেই পদক্ষেপ করা হয়েছে, এছাড়া যে ধারায় মামলা রুজু হয়েছে সেগুলোর কোনওটাই এই ঘটনার সঙ্গে যায় না, এদিন সে কথাও সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতিরা।