যে হামলার নিন্দায় মুখর গোটা বিশ্ব, সেই হামলাকারীকেই উপহার দিতে চায় এক ইরানি সংস্থা। হ্যাঁ, সলমন রুশদির উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হাদি মাতারকেই জমি দিতে চেয়েছে সংস্থাটি, খবর এমনটাই। ঠিক কী বলেছে তারা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মৌলবাদী হামলার পর কোনওক্রমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বুকারজয়ী লেখক সলমন রুশদি। ঘটনায় এক চোখের দৃষ্টি পর্যন্ত হারিয়েছেন তিনি। আততায়ী হাদি মাতারকে গ্রেপ্তার করার পর অবশ্য দেখা গিয়েছিল, এই কাজ করার জন্য কোনও অনুতাপ নেই তার। হামলার কারণ স্পষ্ট করে সে এও জানিয়েছে, ইরানের প্রাক্তন শাসক খোমেইনির ফতোয়া অনুযায়ীই রুশদিকে আক্রমণ করেছিল সে। এই হামলার নিন্দায় সরব হয়েছেন গোটা বিশ্বের মুক্তমনা মানুষেরা। কিন্তু তাতেও ইরানের তরফে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। আর এবার সেই হামলাকারীর উদ্দেশেই উপহার ঘোষণা করল এক ইরানি সংগঠন। যা সে দেশের অবস্থানকেই আরও একবার স্পষ্ট করে দিল বলে মনে করছেন অনেকেই।
আরও শুনুন: মণিপুর থেকে কান… কেন নগ্নতাকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার করে তোলেন নারীরা?
স্যাটানিক ভার্সেস লেখার পরেই মৌলবাদীদের কোপে পড়েন সলমন রুশদি। রুশদির মাথা চেয়ে ফতোয়া জারি করে ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি। এখনও পর্যন্ত যতজন প্রকাশক বা অনুবাদক ওই বইটি নিয়ে এগিয়েছেন, তাঁদের উপর কোনও না কোনও ভাবে হামলা হয়েছে। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকার পরেও ক্রমাগত পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে রুশদিকে। সেই ফতোয়ার তেত্রিশ বছর কেটে গেলেও পরিস্থিতি যে পালটায়নি এতটুকু, তা ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সাম্প্রতিক হামলায়। নিউ ইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর উপর ছুরি নিয়ে চড়াও হয় হাদি মাতার নামের বছর চব্বিশের ওই যুবক। বর্ষীয়ান লেখককে একাধিকবার ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে সে। খোমেইনির মৃত্যু হলেও তার জারি করা ফতোয়া বলবৎ রয়েছে এখনও, আর সেই ফতোয়াকে কার্যকর করতেই ওই যুবক এহেন পদক্ষেপ করে বলে জানিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হেফাজতে নিয়েছে মার্কিন পুলিশ। কিন্তু এবার ওই ধৃতের জন্যই বিশেষ উপহারের ঘোষণা করল একটি ইরানি সংগঠন। তারা জানিয়েছে, এই কাজের পুরস্কার হিসেবে ওই যুবককে ১০০০ মিটার চাষের জমি দেওয়া হবে। ‘ফাউন্ডেশন টু ইমপ্লিমেন্ট ইমাম খোমেইনি’জ ফতোয়াজ’ নামের ওই সংগঠনের প্রধান মহম্মদ ইসমাইল জারেই এও জানিয়েছে, ওই যুবক রুশদির এক চোখ অন্ধ করে দিতে পেরেছে এবং তাঁর একটি হাতকেও অকেজো করে দিয়েছে। আর এই সাহসী কাজের জন্যই তার পুরস্কার প্রাপ্য। রুশদিকে জীবন্মৃত বলেও ঘোষণা করেছে ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: দৃষ্টি হারালেও হারাননি জীবনে বিশ্বাস, ‘ভালোই আছি’, প্রাণঘাতী হামলার পর মুখ খুলে বার্তা রুশদির
যদিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে রুশদির সাম্প্রতিক বই। মার্কিন সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশদি বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে, মৌলবাদের সামনে দাঁড়িয়েও ভয় পাননি তিনি। হামলার জেরে যে তাঁর কণ্ঠরোধ করা যাবে না, সে কথা বারবার বলেছেন তিনি। তারপরেও রুশদির হামলাকারীর জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে কার্যত তাঁকে হুঁশিয়ারি দিল ইরানের ওই সংগঠন।