খুনজখম কিংবা চুরি ডাকাতি, এমন কোনও অপরাধই করেননি তাঁরা। স্রেফ প্রকাশ্যে নেচেছিলেন যুগলে। আর সেই অপরাধেই নাকি সাড়ে দশ বছরের কারাদণ্ড হল তাঁদের। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পার্টিতে, কিংবা ডিস্কো থেক বা নাইট ক্লাবের আসরে নাচের তালে পা মেলান অনেকেই। আর কেবল এই ধরনের জমায়েতেই নয়, কোনও পুজোর ভাসানেও তো রাস্তা জুড়ে নাচতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু জানেন কি, এই স্বাভাবিক আনন্দের প্রকাশকেই বড়সড় অপরাধ বলে মনে করে কোনও কোনও দেশের আইন। যেমনটা ঘটেছে এই যুগলের ক্ষেত্রে। স্রেফ প্রকাশ্যে নাচের অপরাধেই তাঁদের দুজনকে কারাদণ্ডের আদেশ শুনিয়েছে আদালত। তাও এক দুদিন নয়, ১০ বছর ৬ মাস সময় তাঁদের থাকতে হবে জেলের অন্ধকারেই।
ভাবছেন, কোথায় জারি রয়েছে এমন একুশে আইন?
আরও শুনুন: Sex Slave: যৌনদাসীর দিনরাত, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন Nadia Murad
এমন আশ্চর্য নিয়মই জারি রয়েছে ইরানে। আর সেখানেই প্রকাশ্যে নেচে তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ওই যুগল। জানা গিয়েছে, ২১ বছরের আস্তিয়াঝ হাঘিঘি এবং তাঁর প্রেমিক, ২২ বছর বয়সি আমির মহম্মদ আহমদি, ইরানের রাজধানী শহর তেহরানের আজাদি টাওয়ারে নেচেছিলেন। আর সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। আসলে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করতে সে দেশের সরকার যা যা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তার মধ্যে এটিও একটি। কোনও নারী সে দেশে প্রকাশ্যে নাচতে পারবেন না, আর কোনও পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে তো নয়ই। উপরন্তু ইরানের ধর্মীয় বিধিতে কোনও নারীর পক্ষে মাথা না ঢাকা অন্যায়। সম্প্রতি সেই ইস্যুতেই সে দেশের নীতিপুলিশের হাতে মাহসা আমিনির গ্রেপ্তারি এবং মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। যার পরে দেশজুড়ে হিজাববিরোধী আন্দোলনে নেমেছিলেন ইরানের মেয়েরা। এই তরুণীও হিজাব দিয়ে মাথা ঢাকেননি। আর সেই কারণেই অনেকের মত, আসলে মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছিল ইরানে, নিজের মতো করে তারই প্রতিবাদ করেছিলেন এই যুগল।
যদিও নিজেদের পোস্টে মাহসা আমিনি সম্পর্কিত কোনও কথা লেখেননি ওই তরুণ তরুণী। কিন্তু তারপরেও শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে তাঁদের উপরে। গ্রেপ্তারের আগে ওই তরুণীর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সরকার বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ছাড়াও সাইবারস্পেস ব্যবহার করারও অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। দুবছরের মধ্যে দেশ ছাড়তে পারবেন না তাঁরা, জারি হয়েছে এমনই নিষেধাজ্ঞা। প্রকাশ্যে নাচের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং বেশ্যাবৃত্তিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন তাঁরা, এই অভিযোগে তাঁদের কারাবাসের সাজাও শুনিয়েছে ইরানের আদালত।
আরও শুনুন: ‘ঠিকমতো’ হিজাব না পরায় পোশাক খুলতে বাধ্য করেছিল পুলিশ, বিস্ফোরক দাবি ইরানি তরুণীর
মাহসার মৃত্যুর পর প্রতিবাদের ঝড়ে হিজাব আইন নিয়ে সামান্য নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু আস্তিয়াঝ এবং আমিরের এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়ে গেল, কট্টর পন্থার নিরিখে ইরান রয়েছে সেই ইরানেই।