পোশাকবিধি নিয়ে দেশজোড়া অশান্তির মধ্যেই হিজাব-বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। হিজাব পরেননি বলে আমেরিকান সাংবাদিকের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার বাতিল করলেন তিনি। পরোক্ষে যেন নিজের অবস্থানকেই স্পষ্ট করে দিলেন তিনি। শুনে নেওয়া যাক।
কেবল দেশের মেয়েদের উপরেই নয়, যে কোনও মহিলার উপরেই পোশাকবিধি জারি করতে ব্যগ্র ইরান। ছাড় নেই সাংবাদিকদেরও। কেবল হিজাব না পরার দরুনই আগে থেকে নির্ধারিত সাক্ষাৎকার বাতিল করে দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। ফাঁকা চেয়ারের সামনে অপেক্ষা করার ছবি পোস্ট করে এমনটাই জানালেন আমেরিকার সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমানপোর। হিজাব ইস্যুতে দেশজোড়া বিতর্কের মাঝেও যে নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরছে না ইরানের প্রশাসন, এই ঘটনার মাধ্যমে সে কথাই যেন স্পষ্ট করে দিলেন প্রেসিডেন্ট।
আরও শুনুন: রাজ্যসভায় ‘নো স্যার’ বলায় নিষেধাজ্ঞা, মুখের ভাষাতেও লিঙ্গনিরপেক্ষতার পথে হাঁটছে প্রশাসন
জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেছেন প্রেসিডেন্ট রইসি। এদিকে এই সময়েই সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ইরান। হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ আটক তরুণী মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর প্রতিবাদে পথে নেমেছেন ইরানের মেয়েরা। হিজাবে পুড়িয়ে, লম্বা চুল কেটে ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের কড়া হাতে দমন করার নীতি নিয়েছে সরকার। দেশজুড়ে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩০ ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যম। তার প্রতিনিধি হিসাবেই নির্দিষ্ট সময়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন ওই মহিলা সাংবাদিক।
আরও শুনুন: ১৪ ঘণ্টা ধরে রানির শেষকৃত্যের লাইভ কভারেজ! ঘুমিয়েই পড়লেন সঞ্চালক
ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, দপ্তরে প্রায় ৪০ মিনিট বসে থাকার পর একজন এসে তাঁকে হিজাব দিয়ে মাথা ঢাকতে বলেছিলেন। এ প্রস্তাব যে খোদ প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেই এসেছে, সে কথাও জানিয়েছিলেন ওই আধিকারিক। কিন্তু ওই সাংবাদিক বিনীতভাবেই সেই নির্দেশ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তাঁর ধর্ম এবং সংস্কৃতি তাঁকে এমন নির্দেশ দেয় না। এমনকি এর আগে কোনও ইরানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ও তাঁকে এ জাতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন চ্যানেলটির মুখ্য আন্তর্জাতিক সঞ্চালক ক্রিস্টিন। কিন্তু এক্ষেত্রে হিজাব দিয়ে মাথা না ঢাকলে সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না, প্রেসিডেন্টের তরফে এ কথা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, এই প্রথমবার আমেরিকায় সাক্ষাৎকার দিতে চলেছিলেন প্রেসিডেন্ট রইসি। সেই কারণে সপ্তাহভর পরিকল্পনা চলেছিল। অনুবাদের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি, আলো, ক্যামেরা ইত্যাদি সাক্ষাৎকারের জায়গায় ঠিকভাবে রাখতেও প্রায় আট ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সবকিছু প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ উপস্থিত হলেন না খোদ প্রেসিডেন্টই। তবে যে কারণে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে মুখিয়ে ছিলেন সাংবাদিকেরা, ক্রিস্টিনকে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করে সেই হিজাব ইস্যুতে নিজের অবস্থান কার্যত স্পষ্ট করেই দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।