মানুষই দাঁড়াতে পারে অন্য মানুষের পাশে। আর সেখানে বাধা হতে পারে না জাতি ধর্ম কিংবা শ্রেণির বিভাজন। কারণ মানবিকতার কাছে বাকি সব কিছুই বড় তুচ্ছ। সম্প্রতি ইন্দোরে ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় যেন ফের প্রমাণ হল সে কথাই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মানুষের পাশে থাকার জন্য আসলে বেশি কিছু লাগে না। তার জাতি কিংবা ধর্মের পরিচয় জানারও দরকার হয় না। প্রয়োজন হয় কেবল একটুখানি ইচ্ছের। আর তাহলেই বুঝি অন্য কারও কষ্ট অনেকখানি লাঘব করে ফেলা যায়। সম্প্রতি অপরিচিত একজন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ঠিক তেমনই নজির গড়লেন ইন্দোরের এক মুসলিম পুলিশকর্মী।
আরও শুনুন: ভিডিও-সমীক্ষায় ঘোর আপত্তি মসজিদ কমিটির, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে এবার আসরে বিশ্বহিন্দু পরিষদ
কী ঘটেছে আসলে? আসছি সে কথাতেই।
গরমকাল পড়তে না পড়তে প্রায় সারা দেশেই চোখ রাঙাচ্ছে সূর্যের প্রখর তাপ। প্রচণ্ড রোদ, উপরন্তু তাপপ্রবাহ, দুয়ে মিলে দিনের বেলায় বাইরে বেরোনোই যেন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর মধ্যে যাঁদের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হচ্ছে, তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। এঁদের মধ্যেই পড়েন সেই মানুষেরা, যাঁরা কোনও না কোনও ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করেন। সারাদিনই গোটা শহর চষে বেড়াতে হয় তাঁদের। তাও কোনও দ্রুতগামী যানবাহন থাকলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। কিন্তু হেঁটে কিংবা সাইকেলে এই কাজ করা যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই ক্লান্তিকর। সম্প্রতি তেমন একজনকেই নজরে পড়েছিল ইন্দোরের ওই পুলিশকর্মীর। নিয়মমাফিক টহলদারি করার সময় বিজয়নগর পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ তেহজিব কাজি দেখতে পান, ঘেমেনেয়ে একশা হয়েও এক যুবক দ্রুত সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভারি করতে ছুটছে। সাধারণত এই ডেলিভারি অ্যাপের কর্মীরা মোটরবাইকেই যাতায়াত করেন, যাতে দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছনো যায়। কিন্তু ২২ বছরের জয় হালদে-র সেই আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। তার সঙ্গে কথা বলে ওই পুলিশকর্মী তার পারিবারিক অবস্থার কথা জানতে পারেন। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই যুবকের পাশে দাঁড়ানোর।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
সেইমতো নিজের কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন তেহজিব কাজি। সকলে মিলে চাঁদা তুলে ওই যুবককে একটি মোটরবাইক কিনে দেন তাঁরা। সম্পূর্ণ অপরিচিত পুলিশকর্মীদের এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখে আপ্লুত ওই যুবক। তিনি জানিয়েছেন, সাইকেলে যাতায়াত করে এক বেলায় ছটি থেকে আটটির বেশি খাবারের প্যাকেট ডেলিভারি করতে পারতেন না তিনি। কিন্তু এখন সেই সময়ে অনায়াসেই ১৫-২০টি প্যাকেট তিনি ডেলিভারি করতে পারছেন।
মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যে জাতি ধর্মের বিভাজন কখনোই বড় হয়ে উঠতে পারে না, সে কথাই যেন ফের প্রমাণ হয়ে গেল এই ঘটনায়। বরং মানবিকতার এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ওই পুলিশকর্মীরা।