বুলডোজারের কেরামতি নেহাতই কাকতালীয়! নিশ্চিত নয়। ভারত-পাক ম্যাচ যেন আজও যতখানি ক্রিকেট, ক্রিকেটের বেশি ততখানি রাজনৈতিক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সকলের অলক্ষ্যে ফিরিয়ে আনল সেই কুখ্যাত বুলডোজার-রাজনীতি। আদৌ কি ক্রিকেট দিয়ে তাকে সেন্ড অফ জানানো সম্ভব?
বলটা টুর্নামেন্টের সেরা? নাকি গিলকে আউট করে আবরারের অমন ‘সেন্ড অফ’ দেখানো মোটেও উচিত হয়নি! ভারত-পাক চলে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে এখনও এ-তর্ক ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রথমটি ক্রিকেটীয় আলোচনা। দ্বিতীয়টি খানিক ক্রিকেটীয়, মূলত রাজনৈতিক। ভারত-পাক মানেই যে দ্বন্দ্বের আবহ, তা জেন্টলম্যানস গেম এতদিনেও মুছে ফেলতে পারেনি। অতএব বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো ভারতের একজন ব্যাটারকে আউট করে কোণঠাসা পাকিস্তানের একজন ক্রিকেটারের কি এমন আচরণ শোভা পায়! এই তর্কের স্বর যে ক্ষমতা আর অধিকারের তা তো স্পষ্ট। আর তাই-ই আদতে ডেকে আনে বিদ্বেষ। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ মানেই যেন তা গড়িয়ে যায় নানা প্রসঙ্গে। এমনকী টেনে আনতে পারে বুলডোজারও।
:আরও শুনুন:
ঘরে হিন্দুর প্রবেশ নিষেধ, নমাজ পড়েন গোপনে, ম্যাচ জিততে আর কী ‘টোটকা’ পাক অধিনায়কের?
হ্যাঁ, বুলডোজার এসেছিল বটে। মহারাষ্ট্রে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে কেন্দ্র করেই। ঠিক তার পরের দিন। বিনা নোটিশে। ভাঙা হবে একটি দোকান। কেননা সেটি বেআইনি নির্মাণের আওতায় পড়ছে। ঘটনাস্থল ঘিরে তখন কয়েকশো লোকের জমায়েত। একটি দোকান ভেঙেই জেদি বুলডোজার অবশ্য শান্ত হল না। ভাঙা পড়ল আর একটি দোকান। দুয়ের বিরুদ্ধেই বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। অর্থাৎ অন্যের জমিতে দোকান তোলা হয়েছে বলেই অভিযোগ করেছেন খোদ জমির মালিক। সেই অভিযোগ জমা পড়েছিল পুরসভায়। আর তার ভিত্তিতেই ত্বরিত অ্যাকশন। দুই দোকান যে অন্যের জমিতে তা ঠিকই। ভাঙা-পড়া একজন দোকান মালিক জানিয়েছেন, তিনি তো প্রতি মাসেই ভাড়া দেন দোকানের জন্য। এককালীন টাকা জমাও দিয়েছেন। এরকমটাই চলছিল। সব মুখে মুখে। কাগজে কলমে কোথাও কিছু লেখা ছিল না। অথচ…
:আরও শুনুন:
পাকিস্তান হারলেই ভাঙা হবে টিভি, তবে এবার আর নয়, প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বলছেন…
না, অথচের গল্পটা সহজ নয়। এই ভাঙাভাঙির আগের দিন ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ। সেদিন জনৈক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী অভিযোগ করেন যে, এক নাবালকের মুখে ভারত বিরোধী স্লোগান শোনা গিয়েছে। নেহাত অভিযোগেই ব্যাপারটা মিটে যায়নি। তা গড়িয়েছে থানা-পুলিশ পর্যন্ত। আর তার পরদিনই অ্যাকশনে বুলডোজার। যে দুটি দোকান ভাঙা পড়েছে, তার একটি বালকের বাবার, অন্যটি বালকটির কাকার।
বুলডোজারের এই কেরামতি নেহাতই কাকতালীয়! নিশ্চিত নয়। ভারত-পাক ম্যাচ যেন আজও যতখানি ক্রিকেট, ক্রিকেটের বেশি ততখানি রাজনৈতিক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সকলের অলক্ষ্যে ফিরিয়ে আনল সেই কুখ্যাত বুলডোজার-রাজনীতি। আদৌ কি ক্রিকেট দিয়ে তাকে সেন্ড অফ জানানো সম্ভব?