অদ্ভুত বৈপরীত্য গোটা দেশ জুড়ে! একদিকে উপচে পড়ছে ধনসম্পদ। প্রাচুর্যের যেন ফোয়ারা। অন্যদিকে দারিদ্রের অন্ধকারে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে গরিষ্ঠসংখ্যক দেশবাসী। অক্সফামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে চরম অসাম্যের ছবি ধরা পড়ছে গোটা দেশ জুড়ে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অসাম্য যে এ দেশে নতুন তা নয়। একদিকে বৈভব; অন্যদিকে দারিদ্র। দেশে এই দুর্ভাগ্যজনক বৈপরীত্যের ছবি বহুদিনেরই । তবে সাম্প্রতিক অতীতে সেই অসাম্যের ছবিটা যেন ভয়াবহরূপ নিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফাম-এর রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়েই তা দেখিয়ে দিল। এই রিপোর্ট মোতাবেক, ২০২১ সালে অন্তত ৮৪ শতাংশ ভারতবাসীর আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বেড়েছে ধনকুবেরের সংখ্যা।
আরও শুনুন – কবে থামবে ওমিক্রন ঝড়! তৃতীয় ঢেউ শেষের সময় জানালেন বিশেষজ্ঞরা
‘ইনইকুয়ালিটি কিলস’ – এমনই নাম দেওয়া হয়েছে রিপোর্টির। তা, অসাম্য যে মৃত্যুর কারণ হতে পারে সে কথা রিপোর্টে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হচ্ছে। প্রতি পদে পদেই ফুটে উঠেছে অসাম্যের দুর্বিষহ ছবি। দেখা যাচ্ছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২১-এ দেশের ১০০ জন ধনকুবেরের সম্পদ বেড়েছে রেকর্ড মাত্রায়। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়াচ্ছে ৫৭.৩ লক্ষ কোটিতে। অন্যদিকে, ওই একই বছরে অর্থনৈতিক কাঠামোর নিচের সারিতে আছেন যাঁরা, সেইরকম ৫০ শতাংশ দেশবাসীর মোট যা সম্পদ তা আসলে জাতীয় সম্পদের মাত্র ৬ শতাংশ। উল্লেখ করার মতো বিষয় যেটা তা হল, করোনাকালে সাধারণ মানুষের আয় কমলেও, ধনকুবেরদের সম্পত্তি কিন্তু প্রভূত পরিমাণেই বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে এই সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৩.১৬ লক্ষ কোটি। অন্যদিকে শুধু ২০২০-তেই দারিদ্রের শিকার হয়েছিলেন, ৪.৬ কোটি ভারতীয়। অক্সফাম জানাচ্ছে, সংখ্যাটা রীতিমতো ভয়েরই। কেননা নতুন করে যারা দারিদ্রের মুখে পড়েছিলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ সেবার তাঁদের সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। দেখা গিয়েছে, দরিদ্র ভারতবাসীর সংখ্যা সেই পরিসংখ্যানের প্রায় অর্ধেক ছুঁয়ে ফেলছে।
আরও শুনুন – ওমিক্রন আবহে সর্দি-কাশি ভয়ের বিষয় নাকি শাপে বর! বিশেষজ্ঞরা বলছেন…
শুধু ভারতবর্ষে নয়, গোটা বিশ্বেই এই মহামারীকালে ফুলেফেঁপে উঠেছেন ধনকুবেররা। বিশ্বের সবথেকে দশজন ধনী ব্যক্তির সম্পত্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে এই সময়কালে, জানাচ্ছে রিপোর্ট।। একই ছায়া ভারতবর্ষেও। অসংখ্য মানুষের জীবনধারা বদলে যাচ্ছে। স্বচ্ছল থেকে তাঁরা দারিদ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরাও। ক্ষুধা, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া ইত্যাদি কারণে মৃত্যুও হচ্ছে বহু মানুষের। অথচ যদি ভারতবর্ষের কথাই শুধু ধরা যায়, তবে দেখা যাবে, এদেশের ধনকুবেরদের যৎসামান্য সম্পত্তিও যদি কাজে লাগানো যেত, তবে দেশের অনেক বড় বড় সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারত। সে ভ্যাকসিনেশনের খরচ হোক বা বাজেট – বহু আর্থিক সমস্যার সমাধান নিমেষে হয়ে যেত যদি এই ধনী পরিবারের সামান্য সম্পত্তি জনস্বার্থে কাজে লাগত। কিন্তু সেটি তো হবার নয়। উলটে সংস্থার পর্যবেক্ষণ এই যে, অর্থনৈতিক কাঠামোর বিন্যাসই এমন, যাতে বহু সংখ্যক মানুষ মহামারীতে পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তাটুকুই পাননি। শুধু তাই নয় এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে বিত্ত ও ক্ষমতাশালীরা যাতে তাদের সম্পত্তি বাড়াতে পারে, সেই ছিদ্রপথও যেন এই কাঠামর ভিতরই থেকে গিয়েছে। ধনকুবেররা সুযোগ কাজে লাগাতে পিছপা হননি। তাই একদিকে যখন ধনকুবেরদের সম্পত্তি বেড়েছে, ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে, অন্যদিকে তখন বহু মানুষ এগিয়ে যাচ্ছেন দারিদ্রের অন্ধকারে।
এই বৈপরীত্যের ছবি যে রীতিমতো ভয় ধরানো, তা আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। তবে দেশের নীতিনির্ধারকরা এই অসাম্য দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, নয়া অর্থবর্ষে এমনটা আশা করাই যায়।