জঙ্গিহানার দরুন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই খবরের শিরনামে উঠে আসে। তবে তার থেকেও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় প্রেম-যৌনতা এবং সেই সংক্রান্ত ঈর্ষার কারণে। সাম্প্রতিক দিল্লির ঘটনায় যেমন শিউরে উঠেছে মানুষ, সমীক্ষা বলছে, এইরকম খুনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
সঙ্গিনীকে ঠান্ডা মাথায় খুন। তারপর দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা। সেই অবস্থাতেই আবার অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক। দিল্লির খুনের ঘটনার পরত যত খুলছে তত শিউরে উঠছে মানুষ। প্রেমের সম্পর্কে থেকে কেউ যে কাউকে এভাবে খুন করতে পারে, তা যেন হতবাক করে দিচ্ছে মানুষকে। বাস্তব বলছে, এ কোনও আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কেননা সমীক্ষা অনুযায়ী, বিগত বেশ কয়েক বছরের পরিসংখ্যান যদি ঘেঁটে দেখা যায় তাহলে এক আশ্চর্য তথ্য উঠে আসে। তা হল, জঙ্গিহানার দরুন যত মানুষের মৃত্যু হয়, এই প্রেম-পরকীয়া-যৌনতার ছুরির সামনে বলি হয় তার থেকেও বেশি মানুষ। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, জঙ্গিহানায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার থেকে অন্তত ৬ গুণ বেশি মানুষের প্রাণ যায় প্রেম-পরকীয়ার কারণেই।
আরও শুনুন: তরুণীর পেট থেকে উদ্ধার ৪ ফুট লম্বা সাপ! অপারেশনের সময় তাজ্জব চিকিৎসকরাও
পরপর কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ রাখা যাক: ২০২১ সালের এপ্রিলের ঘটনা। দিল্লিতে প্রকাশ্য রাস্তায় বারংবার ছুরি মেরে খুন করা হল এক মহিলাকে। হাসপাতালে কাজ করতেন তিনি। তাঁর হত্যাকারী তাঁর স্বামীই। কারণ, স্বামীর সন্দেহ। মহিলা পরকীয়ায় জড়িত এমনটাই ভাবত হত্যাকারী স্বামী। নাগপুরে এক যুবক খুন করল তার বন্ধুকে। কারণ, সেই সন্দেহ। যুবকটির দাবি ছিল যে, বন্ধুটি তারই প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। স্ত্রীকে খুন করার অপরাধে উত্তরপ্রদেশে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুনের কারণ, অবৈধ সম্পর্ক। ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে হত্যা করে প্রেমিকার সঙ্গে থাকবে ঠিক করেছিল। এ মাত্র কয়েকটি নমুনা। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি দশটি খুনের মধ্যে একটির পিছনেই থাকছে প্রেম-পরকীয়া-ঈর্ষা।
আরও শুনুন: যাত্রী প্রতীক্ষালয় দেখতে মসজিদের মতো, বুলডোজার দিয়ে ভাঙার হুমকি বিজেপি নেতার
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট অতীতে জানিয়েছিল, প্রায় ২৯ হাজার খুনের মধ্যে তিন হাজারের বেশি খুন হয়েছে এই কারণেই। এই ধরনের হত্যাকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। হয় প্রেমের কারণে খুন, নয় অবৈধ সম্পর্কের কারণে খুন। এই ধরনের খুন যে কোনও বিশেষ এক বছরে বেড়েছে তা নয়। অর্থাৎ এটি কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং এর ধারাবাহিকতা আছে। যেমন পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-২০১৪ সালের মধ্যে মোট খুনের ৭-৮ শতাংশ ছিল প্রেম-অবৈধ সম্পর্কের কারণে। ২০১৬-২০২০ পর্বে তা বেড়ে হয়, ১০-১১ শতাংশ। ২০২১ থেকে এই ধরনের খুনের হার বেড়েছে অন্তত ২৮ শতাংশ। বহু খুনের তদন্ত করতেই গিয়েই তদন্তকারীরা দেখছে, প্রাইম মোটিভের জায়গা নিচ্ছে প্রেম ও সম্পর্কই। যা বিপজ্জনক প্রবণতা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এর নেপথ্যে কোনও একটা কারণ থাকতে পারে না। বরং সামগ্রিক ভাবে সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতির বদলেই হয়তো এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট বোঝাচ্ছে, প্রেম শুধু মধুর হয়েই থাকে না। গোপনে বিষিয়ে উঠলে তা ঘাতকও হয়ে উঠতে পারে।