জন্মহার বৃদ্ধির দৌলতে সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা পেয়েছে ভারত। তবে সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশ নয়, জন্মহারের নিরিখে বাকি রাজ্যগুলির চেয়ে অনেকখানিই এগিয়ে রয়েছে গোটাকয়েক রাজ্য। আর তাদের মধ্যেও শিশুজন্মে শীর্ষে সেই যোগীরাজ্য। রোজ কত হাজার শিশুর জন্ম হয় দেশে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে এর আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, মোট জনসংখ্যার নিরিখে খুব দ্রুত বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করতে চলেছে ভারত। সেই সময়ে ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ফের সরব হন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর সাফ দাবি ছিল, দেশে পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাধ্যতামূলক করা হোক। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশেই বর্তমানে জন্মহার গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিপুল জন্মহার, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।
আরও শুনুন: রমজান মাসেই ভাঙা পড়ল ২৫০ বছরের পুরনো মসজিদ-সংলগ্ন মাদ্রাসা, শুরু বিতর্ক
গত বাহাত্তর বছরে এই প্রথমবার বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের তকমা পেল ভারত। সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, চিনের জনসংখ্যা কমা ও ভারতে বাড়ার কারণে শি জিন পিংয়ের দেশকে পিছনে ফেলে ভারতই এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বর্তমানে চিনের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ। সেখানে ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লক্ষ। চিনকে ছাপিয়ে এত তাড়াতাড়ি যে ভারত গোটা বিশ্বে জনসংখ্যার নিরিখে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে, তার অনেকখানি অবদানই কিন্তু যোগীরাজ্যের। কারণ তথ্য ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রতি ২ মিনিটে দেশে জন্মায় ১০০ শিশু। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ জন শিশুরই জন্মস্থান চারটি রাজ্য, যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহ করে স্ট্যাটস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, গড়পড়তা হিসেবে এই ৫০ জন শিশুর মধ্যে ২২ জনের জন্মের সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। আর ১২ জনের বিহারে, মধ্যপ্রদেশে ৮ জনের এবং রাজস্থানে ৭ শিশুর জন্মের সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজনের উত্তরপ্রদেশ অথবা বিহারে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, এমনটাই জানাচ্ছে তথ্য।
আরও শুনুন: যেন উলটপুরাণ! সনাতন ধর্ম রক্ষায় ‘বেদ বিদ্যালয়ে’ জোর কংগ্রেসেরই
এদিকে তথ্য অনুযায়ী ভারতে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই বলেই মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু সমস্যা হল, উত্তরপ্রদেশের মতো কিছু রাজ্যে সেই হার বাকি রাজ্যের তুলনায় অনেক ধীর গতিতে কমছে। যা ছাপ ফেলছে গোটা দেশের জনসংখ্যার উপরেই। আর বেশি জনসংখ্যার কারণে ওই রাজ্যগুলিতে শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে গোটা দেশে প্রতিদিন ৬৭ হাজার ৩৮৫ জন শিশুর জন্ম হয়, যে সংখ্যাটা বিশ্বের দৈনিক জন্মহারের ছয় ভাগের এক ভাগ। কিন্তু প্রতি মিনিটে এই সদ্যোজাতদের মধ্যে অন্তত একজনের মৃত্যু হয় বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির খবরে বিশেষজ্ঞদের চিন্তা যে আরও একটু বাড়ল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।