গোহত্যা আইনত অপরাধ। ক্ষমতায় থাকাকালীন কর্ণাটকে এমনই বিল পাস করেছিল বিজেপি সরকার। সম্প্রতি সেই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে সে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল কংগ্রেস। ‘গো-হত্যায় দোষ কোথায়?’ সরাসরি এই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের পশুপালন মন্ত্রী। নেপথ্যে ঠিক কী যুক্তি তাঁর? আসুন শুনে নিই।
সরকার বদলাতেই বদলে গেল মত। বিদায়ী বিজেপি সরকার কর্ণাটকে গোহত্যা বিরোধী বিল পাশ করেছিল। কিন্তু সেই গো-হত্যা ইস্যুতেই এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বর্তমান কংগ্রেস সরকারের পশুপালন বিভাগের মন্ত্রী কে. ভেঙ্কটেশ। গো-হত্যায় দোষ কোথায়? সরাসরি এই প্রশ্ন তুলেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি।
আরও শুনুন: ‘হিংসা ছড়াতে গোহত্যা হিন্দু সংগঠনের সদস্যদেরই’, যোগীরাজ্যের পুলিশের বক্তব্যে চাঞ্চল্য
যদিও স্রেফ রাজনৈতিক কারণেই এমন প্রশ্ন তিনি তোলেননি। নেপথ্যে রয়েছে কৃষকদের চরম অসুবিধার প্রসঙ্গ। আসলে ক্ষমতায় থাকাকালীন, বিজেপি সরকার কর্ণাটক বিধানসভায় একটি ‘গো-হত্যা’ বিরোধী বিল পাস করেছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, যে কোনও ভাবে গো-হত্যা আইনত অপরাধ। এর জন্য মোটা টাকা জরিমানা কিংবা ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এই ইস্যুতে কর্ণাটক রাজ্য পুলিশকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। গো-হত্যা হয়েছে এমন খবর পেলেই যেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে। এর ফলে গো-হত্যা হতে পারে এমন কোনও অস্ত্র বা সরঞ্জাম যদি কারও কাছে থাকে, তাঁকেও বেশ হেনস্তার মুখে পড়তে হত। এর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। নির্দিষ্ট বয়সের পর গোরুর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসে। সেইসঙ্গে বয়স্ক গোরুর ও তার বাছুরের লালন-পালন খুবই খরচসাপেক্ষ হয়ে পড়ে। একজন সাধারণ চাষীর পক্ষে সেই খরচ বহন করা যথেষ্ট কষ্টের। কিন্তু উপায় তো নেই! ফলত এক্ষেত্রে যে কী করণীয় তাই-ই বুঝে উঠতে পারেননি বহু মানুষ। শুধু তাই নয়, বয়সজনিত রোগের কারণে কোনও গোরু যদি মারাও যায়, তাহলে সেই দেহ নিয়েও রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হত তাঁদের। পুলিশের কাছে খবর গেলেই আর রক্ষে নেই। হাজারও কৈফিয়তের সঠিক উত্তর না দিতে পারলেই শাস্তি অবধারিত। বিগত কয়েকবছরে এই নতুন আইনের জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত সে রাজ্যের একাধিক কৃষকের। তাই তাঁদের সমস্যা মেটাতেই এই প্রশ্ন তুলেছেন ভেঙ্কটেশ। তাঁর সাফ যুক্তি, ‘মোষ কিংবা ষাঁড় হত্যা করতে যদি সমস্যা না হয়, তাহলে গো-হত্যায় দোষ কীসের?’সেইসঙ্গে বিজেপি সরকারের নির্ধারিত গো-হত্যা বিরোধী বিলেও সংশোধন প্রয়োজন, এই দাবিও তুলেছেন মন্ত্রী।
আরও শুনুন: মোদির পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন সিসোদিয়ার! কেমন ছিল অতীত প্রধানমন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা?
আসলে এই সংক্রান্ত একটি বিল ১৯৪৬ সালে পাশ হয়েছিল। তবে সেখানে নির্দিষ্টভাবে গো-হত্যা নিয়ে কোনও কড়াকড়ি ছিল না। শর্তসাপেক্ষ ভাবে ষাঁড়, বলদ কিংবা মহিষ হত্যা আইনত অপরাধ ছিল না। স্রেফ নির্দিষ্ট করা ছিল বয়সের মাপকাঠি। সেই বয়স পেরোলে বা নির্দিষ্ট শর্ত মানলে এই কাজে কোনও অসুবিধা হত না। কিন্তু সেই আইন কার্যত নাকচ করে নতুন একটি বিল নিয়ে আসে বিজেপি সরকার। যেখানে প্রায় সব শর্তই বদলে ফেলা হয়। আরও কড়া শাস্তির নিয়ম যোগ হয়। ফলে গো-হত্যা রীতিমতো বিভীষিকায় পরিণত হয় সে রাজ্যের কৃষকদের কাছে। এবার সেই ভয় দূর করতেই সরব হয়েছে ভেঙ্কটেশ। সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা সকলের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। আর তাই গো-হত্যা বিলে জরুরি সংশোধন চেয়েই এ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।