বিজ্ঞাপনের অছিলায় অপমান করা হয়েছে স্বয়ং মহাকাল শিবকে! আর তার জেরেই জনপ্রিয় খাবার ডেলিভারি সংস্থাকে বয়কটের ডাক হিন্দুত্ববাদীদের। এমনই বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে বলিউড অভিনেতা হৃতিক রোশনের অভিনীত এক বিজ্ঞাপন ঘিরে। কী ছিল সেই বিজ্ঞাপনে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কখনও খাদ্যাভ্যাসের জের। কখনও বা সংস্কারে আঘাত লেগেছে বলে দাবি। এমনই নানা কারণে উঠছে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে বয়কটের দাবি। যা নিয়ে বারেবারেই উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ। সম্প্রতি তেমনই এক বিতর্ক উসকে উঠেছে বলিউড অভিনেতা হৃতিক রোশনের অভিনীত এক বিজ্ঞাপন ঘিরে। হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়ে শেষমেশ ক্ষমাপ্রার্থনার পথেও হাঁটতে হয়েছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাটিকে। কী ঘটেছে ঠিক? আসছি সে কথাতেই।
আরও শুনুন: রোষ শুধুই সিনেমাকে ঘিরে! ‘বয়কট’ ট্রেন্ড ধর্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন? প্রশ্ন উরফির
বর্তমানে দেশে ব্যবসা বিছিয়েছে একাধিক ফুড ডেলিভারি অ্যাপ। যেখানে খাবার আর উপভোক্তার মধ্যে ব্যবধান কেবল দু-একটি ক্লিকের। ব্যস্ত জীবনে খানিক সুরাহা মেলার দরুন ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খাবার ডেলিভারি করা এই সংস্থাগুলি। ব্যবসার নিয়ম মেনেই, গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে নিয়মিত নিত্যনতুন অভিনব বিজ্ঞাপনের পথে হাঁটে তারা। সম্প্রতি সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিল একটি সংস্থা, আর তাই নিয়েই উসকে উঠেছে বিতর্ক।
ওই বিজ্ঞাপনটিতে অভিনয় করেছিলেন বলি দুনিয়ার খ্যাতনামা তারকা হৃতিক রোশন। আধুনিক টেকনোলজির মাধ্যমে তৈরি করা এই বিজ্ঞাপনটি অঞ্চলভেদে বদলে যায়। প্রত্যেকটি অঞ্চলের বেশি জনপ্রিয় খাবারের দোকান অনুযায়ী বদলাতে থাকে বিজ্ঞাপনে বলা রেস্তরাঁর নাম। আসলে এই খাবার ডেলিভারি সংস্থা যে যে-কোনো রেস্তরাঁ থেকেই যে-কোনো জায়গায় খাবার পৌঁছে দিতে পারে, এমন দাবি করেই এহেন বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই অভিনবত্বের জেরেই তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত বিভ্রান্তি। যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে বলেই সোচ্চার হিন্দুত্ববাদীরা।
আরও শুনুন: ‘ভাগ্যিস গডসের ফাঁসি হয়েছিল’, বিলকিস বানো ইস্যুতে বিধায়কের মন্তব্যের পালটা ওয়েইসির
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ওই বিজ্ঞাপনটিতে অভিনেতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘থালি খানে কা মন কিয়া, মহাকাল সে মাঙ্গা লিয়া’। ‘থালি’ অর্থে একাধিক অন্ন ব্যঞ্জন সাজানো এক থালা ফুল কোর্স লাঞ্চ বা ডিনার, যা মেলে অনেক রেস্তরাঁতেই। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন দেখেই বেজায় চটে গিয়েছেন উজ্জ্বয়িনীর ‘মহাকাল’ মন্দিরের পুরোহিতেরা। ভারতের বিখ্যাত শিবক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম এই মহাকাল মন্দির। ওই মন্দিরের পুরোহিতদের দাবি, মহাকাল মন্দিরের প্রসাদ বিনামূল্যে ভক্তদের মধ্যে বিলি করা হয়। তা অনলাইনে অর্ডার করে আনার মতো কোনও সহজলভ্য বস্তু নয় মোটেই। সুতরাং বিজ্ঞাপনটিতে ‘মহাকাল’-এর উল্লেখ করাকে রীতিমতো স্পর্ধার পরিচয় হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। তাঁদের কাছ বিষয়টি স্বয়ং ঈশ্বরকে নিয়ে রসিকতা করার মতো। আর এই মর্মেই তাঁরা বয়কট করার ডাক দিয়েছেন ওই খাবার ডেলিভারির সংস্থাকেই। তাঁদের সুরে সুর মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বয়কটের ট্রেন্ড চালু করেছে কোনও কোনও হিন্দুত্ববাদী সম্প্রদায়। টুইটে রীতিমতো ভর্ৎসনা করে ক্ষমা চাওয়ারও নিদান দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থাকে।
তবে ঘটনার জবাবে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘মহাকাল’ বলতে স্থানীয় এক রেস্তরাঁর কথা বলা হয়েছিল ওই বিজ্ঞাপনে। কোনও ভাবেই ‘মহাকাল’ মন্দিরের নামে অপপ্রচার বা মন্দিরের আরাধ্যকে অপমান করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়, এমনটাই জানিয়েছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবসার খাতিরে বিতর্ক আর না বাড়িয়ে এবার ক্ষমা চাওয়ার পথেই হেঁটেছে ওই সংস্থাটি।