ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশ নয়, খুনির হদিশ দিল মাছি। ঘটনায় অবাক পুলিশ কর্তারাও। খুনি নিজেও বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছেন এই কাণ্ড দেখে। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বলা হয়, অপরাধী সবসময় অপরাধের সূত্র ছেড়ে রেখে যায়। আর সেই সূত্র ধরেই তদন্ত চালায় পুলিশ। পথ সঠিক হলে সাফল্যও মেলে। সিনেমা সিরিয়ালে এমন গল্প সকলেই দেখেছেন। বাস্তবে তদন্তের ধরণ খানিক আলাদা হলেও, সূত্রের গুরুত্ব এখানেও একইভাবে রয়েছে। কিন্তু অপরাধের সূত্র খুঁজে না পেলে? পুলিশ গোয়েন্দার ভোগান্তি হতে বাধ্য!
সম্প্রতি হয়েছে এমনটাই। ঘটনা মধ্যপ্রদেশের। সেখানকার জব্বলপুর এলাকার বাসিন্দা মনোজ ঠাকুর নিখোঁজ হন গত ৩০ অক্টোবর। বছর ২৬ -র এই ব্যক্তিকে শেষবার দেখা গিয়েছিল তাঁর ভাইপোর সঙ্গে। জানা যায়, দুজনে মিলে মদ কিনতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু মনোজ বাড়ি ফেরেননি। এদিকে তাঁর ভাইপো ধরম সিং-এর দাবি এ ব্যাপারে সেই কিছুই জানে না। পুলিশেরও এই দাবি শুনে খটকা লাগে। কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছুই করার ছিল না। ইতিমধ্যেই মনোজের দেহ উদ্ধার হয় স্থানীয় এক মাঠ থেকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। দেহ পাঠানো হয় ফরেনসিকে। তবে সেই মুহূর্তে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। আসল খুনি কে সেই নিয়ে বেজায় ধ্বন্দ্বে পড়েন পুলিশ আধিকারিকরা। কারণ মৃত মনোজের সঙ্গে শেষবার যাকে দেখা গিয়েছে, সেই ধরম কিছুতেই মুখ খুলছে না। বারবার একই উত্তর, কাকার মৃত্যুর ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। তবে হাল ছাড়েনি পুলিশরাও। বারবার ধরমের বাড়ি গিয়ে জীজ্ঞাসাবাদ চালান তদন্তকারীরা। এমনই একদিন জীজ্ঞাসাবাদের সময়, অফিসার লক্ষ করেন কয়েকটা মাছি সবসময় ধরমের আশেপাশে ঘুরছে। তাড়াতে চাইলেও সরছে না। প্রথমে তেমন আমল না দিলেও, বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ হয় তদন্তকারী অফিসার অভিষেক পায়াসির। তিনি ধরমকে বলেন পরনের জামাটুকু খুলে দিতে। পুলিশের আদেশ উপেক্ষা করার সাহস ছিল না ধরমের। তক্ষনি সে জামা খুলে দেয়। এরপরই সামনে আসে আসল সত্যি।
সন্দেহের বশে ওই জামা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান অফিসার। পরীক্ষার পর দেখা যায়, জামায় বেশ কিছু রক্তের দাগ রয়েছে। তবে খালি চোখে তা বোঝা যাবে না। সেই রক্তের গন্ধেই মাছির দল আসছিল বারবার। এরপর জামায় লেগে থাকা রক্ত মনোজের সঙ্গে মেলানো হয়। দেখা যায়, হুবহু মিলে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ধরমের বাড়িতে হাজির হন পুলিশ আধিকারিকরা। এবার জেরার ধরন ছিল একটা আলাদা। কারণ পুলিশের হাতে প্রমান রয়েছে। চাপের মুখে সবটা স্বীকার করে ধরম। আসলে, সে নিজেই কাকার মৃত্যুর জন্য দায়ী। ঘটনার দিন রাতে মদ খাওয়ার পরে টাকা নিয়ে বচসা বাঁধে দুজনের। হাতাহাতি অবধি গড়ায়। রাগের মাথায় পাশে থাকা কাঠের পাটাতন তুলে মারতে থাকে কাকা মনোজকে। একটা সময়ের পর মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তিনি। তারপর এলাকা থেকে চম্পট দেন ধরম। সেই থেকে সবটা চেপে রেখেছিলেন। কিন্তু মাছির দৌলতে শেষরক্ষা হল না।