সংস্কৃত নয়, পড়ুয়াদের বলতে হবে ইংরাজি। এমনটাই চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকা। কিন্তু এই আচরণ মোটেও ভালোভাবে নেননি হিন্দুত্ববাদীরা। স্কুলের সামনে প্রতিবাদ থেকে শুরু করে এই নিয়ে থানায় অভযোগ অবধি দায়ের করেছেনন তাঁরা। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
স্কুলের প্রার্থনায় ইংরাজির বদলে সংস্কৃতে শ্লোক পাঠ করেছে পড়ুয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে থামিয়ে ইংরাজিতে বলার নির্দেশ দেন কনভেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর এই আচরনেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্থানীয় হিন্দুবাদী সংগঠন ABVP-র সদস্যরা। নিয়মের বদল না হলে, স্কুল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি এর জন্য প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই হিন্দুত্ববাদীরা।
:আরও শুনুন:
গ্রামে নেই কোনও মুসলিম, গুজরাটের এই দরগা দেখভাল করেন হিন্দু ব্রাহ্মণরাই
ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের। সেখানকার গুনা জেলার জনপ্রিয় এক কনভেন্ট স্কুলেই এমন কাণ্ড ঘটেছে। এমনিতে এই ধরনের ইংরাজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাধ্যতামূলকভাবে পড়ুয়াদের ইংরাজি বলার নিয়ম থাকে। এখানেও খানিকটা তেমনই করতে চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার ক্যাথরিন ভাত্তোলি (Catherine Vatolly)। আর তাতেই হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি। অবশ্য স্রেফ ইংরাজি বলার নিয়ম চালু করার জন্য নয়, সিস্টার ক্যাথরিনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের ক্ষোভের কারণ এক বিশেষ ঘটনা। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনার জন্য জড়ো হন সকলে। দুজন পড়ুয়ার দায়িত্ব ছি প্রার্থনা শুরুর আগে বক্তৃতা রাখার। আর সেখানেই এক পড়ুয়া গীতার শ্লোক আওড়াতে শুরু করে। ইংরাজির বদলে সংস্কৃত শুনেই ওই পড়ুয়াকে থামার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষিকা। সবার সামনে তাঁর মাইক কেড়ে নিয়ে বলেন, এখানে স্রেফ ইংরাজি বলার নিয়ম রয়েছে। এমনকি ওই পড়ুয়াকের ঠিকমতো ইংরাজি স্পিচ শিখে আসার নির্দেশও দেন।
:আরও শুনুন:
সব তীর্থযাত্রায় মুসলিম ছোঁয়া বাঁচাতে পারবেন তো? কানওয়ার তর্কের মধ্যেই প্রশ্ন কাশ্মীরি নেতার
কিন্তু এইভাবে সংস্কৃতে গীতাপাঠ থামিয়ে দেওয়ার কথা জানতে পেরে বেজায় ক্ষুব্ধ হন ABVP-র সদস্যরা। তক্ষনি স্কুলে চড়াও হন তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েও থামেননি সংগঠনের সদস্যরা। জোর করে স্কুলের ভিতরেও ঢুকে পড়েন কেউ কেউ। প্রধান শিক্ষিকাকে সবার সামনে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলেন সংগঠনের সদস্যরা। এখানেই শেষ নয়, স্কুল বন্ধ করা দেওয়া কথা বলেও অনেকেই শাসিয়ে যান। তাঁদের দাবি ছিল, এই ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত করতে প্রতিদিন স্কুলের প্রার্থনায় ‘জয় শ্রী রাম’ বলার নিয়ম চালু করতে হবে। এমনকি প্রধান শিক্ষিকার নামে থানায় অভিযোগ অবধি দায়ের করেন হিন্দুত্ববাদিরা। এরপরই জানা যায় আসল সত্যি। যেভাবে ঘটনাটি দেখানো হয়েছে, বা হিন্দুত্ববাদীরা যে অভিযোগে সুর চড়ান, তা সম্পূর্ণ সত্যি নয় বলেই দাবি করেন স্কুলের অন্যান্য সদস্যরা। আসলে, মধ্যপ্রদেশের এই কনভেন্ট স্কুলে সপ্তাহের এক একদিনে এক একটি ভাষায় বক্তৃতা রাখার নিয়ম। কোনওদিন হিন্দি আবার কোনওদিন ইংরাজিতে বক্তব্য রাখতে হয় পড়ুয়াদের। তার জন্য নির্দিষ্টভাবে বেছে নেওয়া হয় কয়েকজনকে। বক্ততৃতায় কোনও ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি নেওয়া যাবে না, এমন নিয়মও নেই। বরং স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রার্থনার সময় গীতা, কোরান, গ্রন্থ সাহিব কিংবা বাইবেলের অংশও পাঠ করতে পারেন পড়ুয়ারা। শুধু খেয়াল রাখতে হবে কোনদিন কোন ভাষায় প্রার্থনার নিয়ম। ঘটনার দিন ইংরাজির কথা বলার দায়িত্ব ছিল ওই পড়ুয়ার। তার বদলে সংস্কৃত পাঠ শুরু করায় থামিয়ে দেন প্রধান শিক্ষিকা। অন্যান্য শিক্ষকদের দাবি, একটুও বকাবকি না করে সেদিন ওই পড়ুয়াকে ইংরাজিতে বক্তৃতা রাখার কথা বলেন সিস্টার ক্যাথরিন। পড়ুয়ার প্রস্তুতি না থাকায়, তিনি সময় দিয়ে প্রস্তুত হয়ে আসতে বলেন। তবে সেই ঘটনা যে এমন আকার নিতে পারে, তা ধারণা করতে পারেননি কেউই। এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধান শিক্ষিকাও। তাঁর কথায়, পড়ুয়ারা যাতে সবদিকে পারদর্শী হতে পারে সেকথা ভেবেই এমন নিয়ম চালু করেছিলেন তিনি। কোনওভাবেই কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। কিন্তু ঘটনাটি একেবারেই অন্যভাবে সবাইকে দেখানো হয়েছে, আর জেরে এত বিপত্তি। একইসঙ্গে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন স্কুলের প্রাক্তনিরা।