জালিয়ানওয়ালা বাগ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই স্থানের মাহাত্ম্য নতুন করে কিছু বলার নেই। ইংরেজের গুলিতে যে বীর সংগ্রামীরা শহিদ হয়েছিলেন, আজও তাঁদের স্মরণ করে দেশবাসী। সেই জালিয়ানওয়াল বাগ সেজে উঠল নবরূপে। আর তা নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় জমল নয়া বিতর্ক।
নয়া রূপে জালিয়ানওয়ালা বাগকে সাজিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সেইমতো শুরু হয় কাজ। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নবরূপে সজ্জিত জালিওয়ানওয়ালা বাগের দরজা খুলেছে। কিন্তু সেখানে পা রেখে খুশি নন অনেকেই। এমনকী এই নবীকরণের ফলে ইতিহাস মুছে গিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইতিহাসবিদরা।
আরও শুনুন: নতুন করে তালিবানি ফতোয়ার মুখে আফগান মেয়েরা, থামল গানবাজনাও
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। সেইদিনই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল এখানে। শান্তিপূর্ণ জমায়েতের উপর গুলি চালনার নির্দেশ দেয় জেনারেল ও ডায়ার। প্রাণ যায় নিরীহ মানুষের। দেশের স্বাধীনতার জন্য শহিদ হওয়া সেই মানুষদের আজও স্মরণ করেন দেশবাসী। এই স্থানটির মাহাত্ম্য তাই দেশের মানুষের কাছে যতখানি, ততখানিই তা গুরুত্বপূর্ণ ভারতের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও।
আরও শুনুন: ‘আপত্তিজনক’ ছবিতে হিন্দু দেব-দেবীর ‘অপমান’, অভিযোগে ‘কামসূত্র’-এ আগুন বজরং দলের সদস্যদের
কিন্তু সেই ইতিহাসই মুছে গেল বলে এবার আক্ষেপ ইতিহাসবিদদের। ডায়ারের গুলি থেকে বাঁচতে যে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ, সেটির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি স্বচ্ছ ঢাকনা। যে সরু গলি ধরে ডায়ারের নির্দেশে এগিয়ে গিয়েছিল সৈন্যরা, সেই গলিটি এতদিন অবিকৃতই ছিল। এখন সেই দেওয়ালের উপর নানা ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে লাইট-সাউন্ডেরও। এ ছাড়াও পুরোটাকে যেভাবে একটি সুন্দর বাগানের মতো করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে, তাতে জায়গাটির মাহাত্ম্য এবং ইতিহাসই ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চমন লাল জানিয়েছেন, এটা পুরোপুরিই ইতিহাসের বিকৃতি। একই মত অধ্যাপক ইরফান হাবিবেরও। তিনি জানান, প্রয়োজনের খাতিরে যদি নতুন করে টয়লেট বা ক্যাফে বানানো হত, তাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু যেটা তৈরি করা হয়েছে তার মূল্য চোকাতে হল আমাদের ইতিহাসকে। বলা যায়, ইতিহাসের বিনিময়েই হল এই নবীকরণ।
বর্তমানে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। যা দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিকরাও। তাঁদেরও বক্তব্য, এভাবে ইতিহাসকে মুছে দেওয়া ঠিক হয়নি।