সরাতে হবে উস্তাদজির মূর্তি। এই দাবিতেই বিক্ষোভ। এককালে যে তবলা বাদকের বাজনায় মুগ্ধ হতেন সকলে, তাঁর মূর্তি সরাতেই পথে নামল হিন্দুত্ববাদীরা। দ্বেষের দেশে এমন ছবি নতুন নয়। তবে জাকির হুসেনের মৃত্যুর পরে পরেই এমন ঘটনা বেমানান ঠেকছে অনেকের। অসহিষ্ণুতা নিয়ে কী মত ছিল জাকিরজির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
উস্তাদ জাকির হুসেনের মৃত্যু স্তব্ধ করেছে গোটা দেশের সঙ্গীতমহলকে। সতীর্থরা তো বটেও, গুনমুগ্ধ ভক্তরাও ভাষা হারিয়েছেন। তাঁর জীবনের নানা ঘটনা চর্চায় ফিরেছে। সংবাদের শিরোনাম দখল করেছে জাকির হুসেনের জীবন দর্শন। এই আবহে জনপ্রিয় এক তবলা বাদকের মূর্তি সরানোর দাবিতে উত্তাল হল যোগীরাজ্য।
আরও শুনুন: তবলায় হাত রেখে তিনি যেন দার্শনিক, বিশ্বমানবতার পথিক
যদিও এই ছবি নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে দেশ, নাম জড়িয়েছে যোগীরাজ্যের। মন্দির-মসজিদ বিতর্ক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক মহল উত্তাল হয়েছে। আগুনে ঘি ঢেলেছে সোশাল মিডিয়া। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। মূর্তি সরানোর দাবিকে কেন্দ্র করে যোগীরাজ্যের এই ঘটনাতেও সোশাল দুনিয়ায় নানা মুনির নানা মত। যার মূর্তি সরানোর দাবি উঠেছে, তিনি একজন মুসলিম তবলাবাদক। আর যারা বিক্ষোভ করছেন তাঁরা হিন্দুত্ববাদী। তাই এই ঘটনায় অসিষ্ণুতার প্রসঙ্গ টানছেন কেউ কেউ। আর সেখানেই ফিরছে উস্তাদ জাকির হুসেনের কথা। অসহিষ্ণুতা নিয়ে কী ভাবতেন উস্তাদ, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেকে। কয়েক বছর আগে উস্তাদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমদের প্রতি অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে তাঁর কী মত? খুব সাবলীলভাব উত্তর দিয়েছিলেন উস্তাদ। তাঁর মতে, এই অসহিষ্ণুতা বিষয়টাই রাজনীতির অংশ। সরাসরি কোনও দল বা ব্যক্তির নাম না নিলেও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অসহিষ্ণুতা রাজনিতিকদের তৈরি করা বিষয়। কথা প্রসঙ্গে দেশের কিছু মুসলিম শিল্পীর নাম করেন উস্তাদ। শাহরুখ-আমির থেকে শুরু করে উস্তাদ আমজাদ আলি খান, প্রত্যেকেই এ দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন, মনে করিয়ে দেন জাকিরজি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও অগুনতি ভক্তের ভালোবাসা পেয়েছেন সে কথাও জানান। সবমিলিয়ে তাঁর উত্তরে এই বিষয়টাই স্পষ্ট হয় যে, অসহিষ্ণুতা কোনও ব্যক্তি বা জাতির তৈরি করা হতে পারে না। এর নেপথ্যে রাজনীতির চাল থাকে।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাকিরজির এই মন্তব্য চর্চায় ফিরেছে, সেটি মোরাদাবাদের। সম্প্রতি সেখানকার জনবহুল এক রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে হিন্দুত্ববাদীদের একটি দল। তাতে গেরুয়া শিবিরের অনেকেই ছিলেন। তাঁদের দাবি, রাস্তার মোড়ে থাকা উস্তাদ আহমেদ জন খান থিরকয়ার মূর্তি অবিলম্বে সরাতে হবে। তথাকথিত পরিচিত না হলেও এই মুসলিম তবলাবাদক এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ভারত সরকারের তরফে পেয়েছেন পদ্ম ভূষণ। সেই শিল্পীর মূর্তি সরানোর দাবিতেই উত্তাল হয় মোরাদাবাদ। তবে নেপথ্যে কারনও রয়েছে। আসলে, যে রাস্তার মোড়ে ওই মূর্তি রাখা হয়েছে তার কাছেই সুভাষ ক্রসিং। তাই ওই স্থানে নেতাজীর মূর্তি রাখা হোক, এমনটাই চেয়েছেন ঐ অঞ্চলের হিন্দুত্ববাদীরা। তবে প্রতিবাদের ধরন অসহিষ্ণুতাকেই ইঙ্গিত করেছে। তাই বিষয়টা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে নেটদুনিয়ায়। এদিকে, তবলাবাদক উস্তাদ আহমেদ জনের মূর্তিটি কালো পলিথিনে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া অবধি বিক্ষোভ চলবে এই হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।