মায়ের মৃত্যুর পরও শোককে ছাপিয়ে গিয়েছে ধর্ম। কোন ধর্মের রীতি মেনে শেষকৃত্য হবে মায়ের, তাই নিয়েই বিবাদে জড়াল মৃতার দুই সন্তান। আর সে বিবাদ গড়াল এত দূর যে শেষমেশ পুলিশকে এসে হস্তক্ষেপ করতে হল ঘটনায়। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মায়ের জীবদ্দশায় তাঁর খেয়াল রাখুন বা না রাখুন, তাঁর মৃত্যুর পর ধর্ম বজায় রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন তাঁর দুই সন্তান। সহোদর হলেও, ধর্মবিশ্বাসে তাঁরা দুজন আলাদা। ভাই হিন্দু, বোন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাই মায়ের শেষকৃত্য কোন রীতি মেনে হবে, সে বিষয়ে নিজের নিজের ধর্মকে অগ্রাধিকার দিতে চান দুজনেই। মায়ের দেহ কবর দেওয়া হবে, নাকি চিতার আগুনে দাহ করা হবে, তা নিয়েই সমস্যা। আর তাই নিয়েই দুই ভাইবোনের মধ্যে বাধল জোর বিবাদ।
আরও শুনুন: মায়ের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ, বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে থানায় হাজির দুই খুদে
কথায় বলে, ভাগের মা গঙ্গা পায় না। সে কথাই যেন একভাবে সত্যি হয়ে গিয়েছে এই মহিলার ক্ষেত্রে। জানা গিয়েছে, ওই পরিবারটি হায়দরাবাদের বাসিন্দা। মহিলার এক ছেলে মৃত। আরেক ছেলে রয়েছে। তবে তাঁর খেয়াল রাখতেন মেয়েই। গত ১২ বছর ধরে তিনি মেয়ের কাছেই থাকতেন বলে দাবি মহিলার মেয়ের। প্রায় বছর কুড়ি আগে মহিলার মেয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। বর্তমানে তাঁর বয়সও প্রায় ষাট। তিনি দাবি করেছেন, মা তাঁর কাছেই থাকতেন, এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। মায়ের ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কিছু ভিডিও-ও দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ভাই কখনোই মায়ের খেয়াল রাখেননি। সম্প্রতি মায়ের একটি অস্ত্রোপচার করাতে হয়। তার জন্য ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে সময়েও ভাইকে পাশে পাননি বলেই অভিযোগ করেছেন তিনি। মেয়ের কথায়, মৃত্যুর পরেও এই পরিস্থিতির বদল হবে বলে মা আশা করেননি। তাই মেয়েকেই তাঁর শেষকৃত্য করার কথা বলে যান তিনি।
আরও শুনুন: জোর করে মহিলার ধর্ম পরিবর্তন মুসলিম ব্যক্তির! অভিযোগ পেয়ে বিশেষ পদক্ষেপ আদালতের
কিন্তু দেখা যায়, মায়ের মৃত্যুর কথা জেনে হাজির হন মহিলার ছেলেও। আর তারপরেই বাধে জোর গণ্ডগোল। দুজনের সমর্থনেই আরও লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। দুজনের সঙ্গেই কথাবার্তা বলে পুলিশই সমস্যার রফা করে। মেয়ের বাড়িতে ইসলামি রীতি মেনে শ্রদ্ধা জানানো হয় মৃতাকে। তারপরে শেষকৃত্যের বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য ছেলের হাতেই মহিলার মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে। মায়ের শেষকৃত্যে একরকমভাবে অংশ নিয়েছেন দুই ভাইবোনই।