কোনও চমকপ্রদ খবর শুনতে না শুনতেই দৌড় শুরু। কে আগে সেই খবর জানাতে পারবেন অন্যদের! আদৌ সে খবর সত্যি না মিথ্যে, ভাল করে খোঁজ নেওয়ারও দরকার নেই। আজকের দিনে ইন্টারনেটের দৌলতে ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা কিন্তু উসকানি জোগাতে পারে হিংসা-হানাহানি বা কোনোরকম অপরাধেও। সেদিকেই ইঙ্গিত করছে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা।
ইন্টারনেটের সুবাদে একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে কোনও তথ্য। আপনার কী মনে হল, একটু খোঁজখবর করে দেখলেন। হ্যাঁ, ইন্টারনেটেই। আর তার ফলে হয়তো দেখা গেল, এত মানুষ যাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করছেন, বিশ্বাস করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন আরও একাধিক মানুষের মধ্যে, সেই তথ্যটি আদপে ভুয়ো। আন্তর্জালের এই বাড়বাড়ন্তের যুগে এমনটা হয়েই চলেছে আজকাল। সম্প্রতি দেখা গেল তেমনই এক ঘটনা।
আরও শুনুন: ৬০০ ঘণ্টা ধরে বাতিল যন্ত্রাংশ দিয়ে মোদির মূর্তি গড়ে তাক লাগালেন বাবা-ছেলে
‘সব মসজিদের সত্যি এটাই।’ এই শিরোনামের সঙ্গে একটি ছবি সম্প্রতি আপলোড করা হয়েছিল সোশাল মিডিয়ায়। তারপর অসংখ্য লাইক এবং রিটুইট জুটেছে সেই পোস্টটির ভাগ্যে। ছবিটি ছিল শিবের বাহন নন্দীর একটি মূর্তির। নন্দীকে পবিত্র বলে মনে করেন হিন্দুরা। আর এই আবেগকেই কাজে লাগিয়ে ছবিতে বলা হয়েছিল, মূর্তিটি নাকি পাওয়া গিয়েছে একটি মসজিদ খনন করার সময়। শিরোনাম থেকে এ কথাও বুঝতে অসুবিধা হয় না, সাম্প্রদায়িকতার ইশারা রয়েছে সেখানে।
আরও শুনুন: চেন্নাইয়ে মহিলা কলেজে বসবে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, উদ্বোধনে মমতাকে চায় কর্তৃপক্ষ
সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার স্বার্থে কোনও ছবি বা তথ্যকে বিকৃত করা বা নিজের মনমতো পরিবেশন করার চল শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরেই। এক্ষেত্রেও ঘটেছে প্রায় তেমনই ঘটনা। রিভার্স ইমেজ সার্চে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, টুইটটিতে করা দাবি আসলে মিথ্যে। মূর্তিটি আদৌ কোনও মসজিদ খুঁড়ে পাওয়া যায়নি। বরং আসলে মূর্তিটির হদিশ মিলেছে একটি মন্দিরের ভেতর থেকেই। তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার সেলান্দিয়াম্মান মন্দিরে কিছু মেরামতির কাজ চলছিল। সেই সময়েই মন্দিরপ্রাঙ্গণ খনন করার প্রয়োজন পড়ে। আর তার ভেতর থেকেই নন্দীমূর্তির আবির্ভাব। ৪ সেপ্টেম্বর মন্দির সংক্রান্ত একটি পেজ থেকে টুইট করা হয়েছিল সেই ছবিটি। একাধিক স্থানীয় সংবাদপত্রেও স্থান পেয়েছিল এই খবর। সেই ছবিটিকেই কোনও স্বার্থের বশে এমন বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মজার কথা হল, আদি টুইটে শিরোনাম ছিল, সত্যকে গোপন করা যায়, কিন্তু চিরদিন নয়। বর্তমান ভুয়ো টুইটটির ক্ষেত্রে প্রমাণ হয়ে গেল সে কথাই।