ঐতিহাসিক সৌধ তাজমহলের ভিতর কেন ২২টি ঘরের দরজা বন্ধ? কী আছে তার ভিতরে? সত্য উন্মোচিত হোক। এই মর্মে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে আদালতের ভর্ৎসনার মুখেই পড়তে হল আবেদনকারীকে। এ বিষয়ে ঠিক কী বলল আদালত? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মুঘল আমলে তৈরি সৌধ কি আদতে ছিল শিব মন্দির? তাজমহল নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। সম্প্রতি তা নতুন করে উসকেছে। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। তাজমহলের ২০টির বেশি বন্ধ দরজার পিছনে কোন প্রকৃত সত্য লুকিয়ে আছে? তা জানানো হোক। তৈরি করা একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। এই সত্য জানার অধিকার আছে ভারতবর্ষের নাগরিকদের। সম্প্রতি এই মর্মেই এলাহাবাদ হাই কোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা। বিজেপির অযোধ্যা ইউনিটের মিডিয়া-ইন-চার্জ রজনীশ সিং ছিলেন আবেদনকারী। এ বিষয়ে তিনি একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। যার উত্তরে আদালতের ভর্ৎসনার মুখেই পড়তে হল তাঁকে। বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং সুভাষ বিদ্যার্থীর বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিল, জনস্বার্থ মামলাকে যেন এভাবে প্রহসনে পরিণত না করা হয়। এই আবেদন শেষমেশ খারিজই করে দিল আদালত।
আরও শুনুন: ‘হিন্দুরাষ্ট্র করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান!’ কেন্দ্রকে একহাত নিলেন যশবন্ত সিনহা
এদিন এই মামলায় আদালত ক্ষুণ্ণ হয়েই আবেদনকারীকে জানায়, আদালত কি এখন ঠিক করতে বসবে যে, কে তাজমহল তৈরি করেছিলেন? এরপর তো কোনদিন বিচারকদের চেম্বার দেখার অনুমতি চেয়ে বসবেন আবেদনকারী! বিচারকদের প্রশ্ন, এক্ষেত্রে আবেদন ঠিক কী নিয়ে? আবেদনকারী ঠিক কী চাইছেন? আবেদনকারীর তরফে জানানো হয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বাস যে, তাজমহল আসলে ছিল শিব মন্দির। বহু সাধু এমনকী কোনও ইতিহাসবিদও এই মতকে সমর্থন করেন বলে তাঁর দাবি। দীর্ঘদিন ধরে যে বিতর্ক চলছে, তাতে ইতি টানতেই তাজমহলের বন্ধ ঘরগুলো খুলে দেখা দরকার বলে তিনি মনে করেন। এবং, সেখানে কী আছে তা যেন সাধারণের সামনে প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারীর দাবি, প্রকৃত সত্য সামনে আসা উচিত। আর সেই কারণেই আদালত এই বন্ধ দরজাখুলো খুলে দেখার অনুমতি দিক। এই নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি দিক আবেদনকারীকে।
আরও শুনুন: শহিদ হয়েছিলেন স্বামী, শিক্ষকতা ছেড়ে তবু ভারতীয় সেনাতেই যোগ দিলেন স্ত্রী
জবাবে আদালতের পালটা প্রশ্ন, আবেদনকারী কি মনে করেন যে তাজমহল শাহজাহান তৈরি করেননি? এক্ষেত্রে তিনি কী আশা করেন যে, কে তাজমহল তৈরি করেছিল, আদালত সেই বিষয়ে রায় দেবে? আবেদনকারীর ঐতিহাসিক বিশ্বাসের দিকে যেন আদালতকে চালিত না করা হয়, সে ব্যাপারেও জানান বিচারকররা। আদালত জানায়, নিরাপত্তার কারণেই বন্ধ দরজা খোলার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে আবেদনকারী যে বিশেষ নির্দেশ চাইছেন, তা যদি অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়, সেক্ষেত্রেই দেওয়া সম্ভব হয়। অন্যথায় নয়। আদালতের আরও প্রশ্ন, আবেদনকারীর ঠিক কোন অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে যে, তিনি এই বিশেষ নির্দেশ চাইছেন? আদালতের পর্যবেক্ষণ, যদি আবেদনকারীর মনে হয় যে, নিরাপত্তার খাতিরে ঘরগুলো বন্ধ নেই, তাহলে আইন মোতাবেক তিনি অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রশ্ন এ বিষয়ে কি তিনি যথেষ্ট গবেষণা করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, নিরাপত্তার জন্যই দরজাগুলো বন্ধ নেই। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে আগে যেন তিনি এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত গবেষণা করেন। বা গবেষণা করার জন্য যে যে প্রক্রিয়াগুলো আছে তা পূর্ণ করেন। নচেৎ গবেষণার জন্য বন্ধ দরজা খোলার অনুমতি মেলা সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে এদিন আদালতের ধমকের মুখেই পড়েন আবেদনকারী। ক্ষুণ্ণ আদালত জানিয়েছে, এই ধরনের তর্ক-বিতর্ক বাড়ির বৈঠকখানার জন্য উপযুক্ত, আদালতের জন্য নয়। এই সংক্রান্ত আবেদন খারিজের পর শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেই জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।